ঈদ হোক সবার, মানুষ দাঁড়াক মানুষের পাশে

হাসান আকবর | রবিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সচরাচর এক ডজন বাংলা কলার দাম ৭০-৮০ টাকা। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে ২শ টাকায়। ৫০-৬০ টাকায় একটি কচি ডাব পাওয়া যেত। এখন একটি ডাবের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। একটি বেল বিক্রি হতো ১০-২০ টাকায়। এখন সেই বেল হাঁকা হচ্ছে প্রতিটি ১শ টাকা। পেঁপের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বেগুন, ধনেপাতাসহ সব জিনিসের দামই অস্বাভাবিক।
প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে রোজা। রোজার কারণে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেগুন নিয়ে যা হলো তা তো এককথায় অস্বাভাবিক। রোজা এলে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে প্রতি বছর শুরু হয় এমন অস্থিরতা। বেগুনের পরিবর্তে পেঁপে ব্যবহারের কথা পুরনো। এবার কুমড়োর ব্যবহারও মানুষ দেখল।
বাজার জুড়ে চলছে অরাজকতা। হাটে-বাজারে, দোকানে-শোরুমে বা শপিংমলে নৈরাজ্য। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। রোজাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে বাজারে যা চলছে বা ঈদকে সামনে নিয়ে আগামী কয়েকদিন যা চলবে তাতে সাধারণ মানুষের আকুতি একটাই-জাগ্রত হোক মানবতা। মানুষ হয়ে উঠুক সত্যিকারের মানুষ। উৎসবকে উৎসবমুখর করতে মানুষের পাশে দাঁড়াক মানুষ। ধর্ম পালনে মানুষ সহায়তা করুক মানুষকে। মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রচিত হোক বাসযোগ্য এক সমাজ। হোক মানবতার জয়গান। এমন প্রার্থনা সবার।
সততা, মানুষের প্রতি আন্তরিকতা এবং সমাজের প্রতি কমিটমেন্টই উৎসবকে উৎসবমুখর করতে পারে। পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশের চালচিত্র। জাতি হিসেবে আমাদের ইমেজকে নিয়ে যেতে পারে ভিন্ন উচ্চতায়। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এবং মানুষকে আনন্দে রাখার সুযোগ পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই লুফে নেয়। উৎসবকে উৎসবমুখর করে নিজেরাও সামিল হয় সেই উৎসবে। কিন্তু এদেশ যেন ভিন্ন গ্রহের। শুধু নিজের জন্যই বেঁচে থাকা, নিজেকে আনন্দে রাখা। কিন্তু সবার মুখের হাসি কেড়ে নিয়ে একা আনন্দে থাকা যায়?
ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসবকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার দেশে দেশে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেয়া হয়। কোথাও কোথাও পণ্যমূল্য নামিয়ে আনা হয় অর্ধেকে। মানুষ ওই বিশেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। পুরো বছরের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস বিশেষ ছাড়ের সময় কিনে। উৎসবমুখর পরিবেশে কেনাকাটা করে। পণ্যমূল্য কমিয়ে দেয়ায় উৎসবের মাঝেই সৃষ্টি হয় নতুন উৎসবের।
ইউরোপ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে বড়দিন উপলক্ষে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হয় পণ্য। শুধু বড়দিন নয়, খ্রিস্ট ধর্মীয় বড় বড় সব উৎসবকে কেন্দ্র করে শপিংমলগুলোতে সেল-এর হিড়িক পড়ে। অর্ধেক দামে বিক্রি হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি জামা-কাপড় থেকে শুরু করে বিলাস ও শৌখিন দ্রব্য। চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ আশেপাশের দেশগুলোতেও একইভাবে উৎসবকে উৎসবমুখর করা হয়। বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ সবগুলো উৎসব ঘিরে বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করা হয় পণ্য। চাইনিজ নিউ ইয়ার উপলক্ষে চীনসহ সন্নিহিত দেশগুলোতে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয় অনেকাংশে।
রমজানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়ীরা বড় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করেন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে পণ্যের মূল্যে দেয়া হয় বড় ছাড়। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পূজাকে কেন্দ্র করে কমিয়ে দেয়া হয় পণ্যের দাম।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে উৎসব উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান। সাধারণ মানুষ নির্ঝঞ্জাটে ধর্মকর্ম করে, উৎসবের আবহে কেনাকাটা করে, উপহার বিলি করে। সকল মানুষই কম-বেশি সামিল হয় উৎসবে। ব্যবসায়ীরা কম লাভে বেশি পণ্য বিক্রি করেন। স্বল্প মুনাফায় প্রচুর বিক্রির অর্থনীতির সূত্রটি কাজে লাগিয়ে তারা লাভবান হন। সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিন শেষে তারাও সামিল হন উৎসবে। এতে করে উৎসবটি সর্বজনীন হয়ে ওঠে।
ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। একেকটি উৎসব এখানে আতংক হয়ে দেখা দেয়। পণ্যমূল্য এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সাধারণ মানুষকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছাড়িয়ে যায়। প্রতিটি উৎসবকে ঘিরে পণ্যমূল্য বাড়ে। রমজানকে কেন্দ্র করে দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। ক্রমে দীর্ঘ হওয়া টিসিবির লাইনে বাড়ছে মানুষের আক্ষেপ। তেল, চাল, পেঁয়াজ, রসুন কিংবা আদা-চিনির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে যেভাবে তেলেসমাতি চলে তার নজির দুনিয়ায় নেই। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য বাড়ানোর এই হিড়িকে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
স্বাভাবিক বাজারদরের সাথে রমজানের দুই-চারদিন আগের বাজারদরের ব্যবধান মানুষকে অসহায় করে তুলছে। ঈদের আগে আরো এক দফা পণ্যমূল্য বাড়ার শঙ্কায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
কেবল মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ালেই থাকবে না এই আতংক। উৎসব হয়ে উঠবে উৎসবের মতো। তাই আসুন, মানুষ হয়ে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, মানুষকে উৎসব করার সুযোগ দিয়ে নিজেরাও সামিল হই উৎসবে। পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করি, মানুষের আনন্দ নিয়ে যেন বেসাতি না করি। রোজা কিংবা ঈদে কেউ যেন কারো মনোকষ্টের কারণ হয়ে না উঠি। ঈদ হোক সবার, উৎসব হোক সকলের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার ১০ লাখ মুসলিমকে হজের অনুমতি দিল সৌদি
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা