ঈদের আগে বিনোদন পার্ক খুলে দেয়ার অনুরোধ বাপার

আজাদী অনলাইন | রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৩:১৬ অপরাহ্ণ

আসন্ন ঈদের আগে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিনোদন পার্ক সমূহ খুলে দেওয়া এবং সরকার কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হলে বিনোদন শিল্পকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতাভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অভ এমিউজম্যান্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনস (বাপা)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। করোনার শুরু থেকেই অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসায়িক খাত বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন খাতে দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রণোদনা। করোনার তীব্র সংক্রমণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অবহেলিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিনোদন ও পর্যটন খাত। গত বছরের শেষ দিকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে অনেক বিনোদন ও পর্যটন শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার ২য় ধাপে আবারো বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র গুলোর ব্যবসায়িক মৌসুম হল ঈদ। এই সময়ে প্রচুর পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রসমূহ। অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণ-পরিবহন সরকারী সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও এই খাতটির সকল ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এখন যদি বিনোদন পার্কগুলো খুলে না দেওয়া হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মানুষের জীবন ও জীবিকা একসাথে চালাতে হয়, এটি একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতঃভাবে জড়িত। সেজন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্কের ধারন ক্ষমতার ৫০% এর কম দর্শনার্থী প্রবেশ ও তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত রেখে কার্যক্রম পরিচালনা সহ পার্কের মূল প্রবেশ দ্বারের বাইরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো, দর্শনার্থী পরীক্ষা পূর্বক টিকেট সংগ্রহ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, ফুড কোর্ট আর রাইডগুলো নিয়মিত স্যানিটাইজ করা সহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বিধি এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্ত ব্যবস্থা বাপা’র পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তা নিশ্চিত করেই পার্ক গুলো পরিচালনা করে আসছিল। উল্লেখ্য, ৫০% এর কম দর্শনার্থীর কথা বলা হলেও, বাস্তবে ধারন ক্ষমতার ২০% দর্শনার্থীও এখন আসে না।
সম্প্রতি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ঘরের চেয়ে বাইরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। এ বিবেচনায় বিনোদন পার্কগুলো যেহেতু খোলা জায়গায় অবস্থিত সেহেতু এখান থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। ৬ ফিটেরও অধিক দূরত্ব হতে দর্শনার্থী দের সেবা প্রদান করা সম্ভব যা অন্যান্য সেক্টর গুলোতে বজায় রাখা সম্ভব নয়।
বিনোদন ও পর্যটন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ এবং ব্যাংক লোন রয়েছে। লকডাউন কালীন এ সেক্টর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যে ধ্বস নেমেছে তাতে শুধু প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বড় একটি অংশের ঋণখেলাপী হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ সেক্টর বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না এবং অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরিচ্যুত হবে। সেই সাথে এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা দিন দিন দুরহ হয়ে পড়বে। উ্ল্লেখ্য, গত বছর লক ডাউনের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ সেক্টর সমূহের জন্য সরকার ঘোষিত প্রনোদনা দেওয়া হলেও পর্যটন শিল্প তথা বিনোদন পার্ক গুলোকে সরকার ঘোষিত প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয় নি।
তাই সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদের কিছু দিন পূর্ব হতে অন্যান্য সেক্টরের মত পার্ক গুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে আশু সরকারি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। উ্ল্লেখ্য যে, কক্সবাজার, কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত বা পার্বত্য জেলা সমূহের মতো খোলা জায়গায় দর্শনার্থীদের যে ঢল নামে ,যেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হলেও বেসরকারী ভাবে পরিচালিত বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ, তাদের সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং যা আমরা এ লকডাউনের আগেও গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পার্ক গুলো পরিচালনা করেছি। তাই আমরা মনে করি ঐ সকল পর্যটন কেন্দ্র গুলোর সাথে বেসরকারী ভাবে বিনিয়োগ কৃত বিনোদন পার্ক গুলোকে একই দৃষ্টিভঙ্গি তে বিচার করা ঠিক হবে না। এছাড়াও বাংলাদেশে যত ওয়াটার পার্ক আছে সেখানের পানি ক্লোরিন দ্বারা পরিশোধিত আর ক্লোরিন মিশ্রিত পানি করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্তরায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় গ্রেপ্তার কথিত ‌‌`সিআইডি অফিসার`
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশ যেতে পারছেন না খালেদা