ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন

| শনিবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশ ও জনগণের সেবায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশের প্রতিটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষায়িত নৌ পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ইউনিটকে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঈদযাত্রায় কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে দেশের সব মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ ও জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং বিশেষায়িত ইউনিটের কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় এ নির্দেশ দেন।

ঈদযাত্রায় ভয়ংকর পরিস্থিতির শঙ্কা করছেন অনেকেই। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ গ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবে। কিন্তু প্রতিদিন ১৬ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির। বাকি ১৪ লাখ মানুষকে যেতে হবে ‘বিকল্প উপায়ে’। ঈদের আগের চার দিন এই পরিস্থিতি থাকবে। গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে ঈদযাত্রায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা। তাঁরা জানান, যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ২৫ রমজান থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত রাজধানী অচল হয়ে যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সময় বুয়েটের দুর্ঘটনা কেন্দ্রের পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ ও সময়ে ঈদে বাড়িতে যান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছরে চার ঈদে মানুষ গ্রামে কম গেছে। আমাদের চলমান একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঈদের আগে চার দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।

প্রতিদিন বাসে ৮ লাখ, ট্রেনে ১ লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ, ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রায় ৪ লাখ, মোটরসাইকেলে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারবেন। বাকি প্রায় ১২-১৩ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে ট্রাক ও ট্রেনের ছাদে করে। তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির কারণে এবারের ঈদে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। ঢাকা থেকে ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করবে।’ ঈদযাত্রায় বাড়তি নিরাপত্তা, সতর্কতার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে।’

তবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে রাস্তার উপর থেকে দোকান ও হাট-বাজার সরিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া মহাসড়কে নসিমন-করিমন চলাচল ও অযান্ত্রিক যানবাহন যেমন রিকশা, ভ্যান, গরুর গাড়ি, টমটম চলাচল বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকছে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল ও ভিজিলেন্স টিম। সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে বলেছেন, আসন্ন ঈদে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা আন্তরিক। মানুষ যেন ভোগান্তিমুক্তভাবে নিজ নিজ বাড়ি যেতে পারে এবং ঈদের পর নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে পারে সেজন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নেবে।

আমরা আশা করবো, পরিবহনের সঙ্গে যাঁর যুক্ত আছেন, তাঁদের সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে। লঞ্চ, ট্রেন বা বাসে ঝুঁকি নিয়ে যেন কেউ যাত্রা না করেন। জীবনের মূল্য যে কত বেশি, সেটা অনুধাবন করতে হবে সবাইকে। ঈদের আনন্দযাত্রা যেন বিষাদে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে