ঈদবাজার নিয়ে শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩১ মার্চ, ২০২১ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ের করোনার ঊর্ধ্বগতিতে আগামী ঈদবাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও উদ্বেগ। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হচ্ছে রমজান। স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন শপিংমল-ফ্যাশন হাউসের মালিকরা সারা বছর রমজান মাসের দিকেই তাকিয়ে থাকেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরো বছর মোট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশ আসে রমজান মাসে। তবে গত বছরের মতো এ বছরও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। শুধুমাত্র করোনায় হাজার কোটি টাকার ঈদ বাজার হারায় ব্যবসায়ীরা। তাই এবার সীমিত পরিসরে হলেও মার্কেট চালু রাখার সুযোগ চেয়েছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতা-ব্যবসায়ী সবার মনে গত ঈদের পরিস্থিতি ভেসে উঠছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, এবারও গত ঈদের মতো পরিস্থিতি হবে না তো? তবে গত বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল, এবার সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারপরও পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে সরকার হয়তো তখন কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু হয়েছে। রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত বছরের এ সময়ের চেয়ে এবার করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ মনে হচ্ছে। গত রমজানের ঈদে আমরা বড়সড় লোকসান দিয়েছিলাম। তাই এ বছর ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক ব্যবসায়ী লোন নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে পণ্যও আসা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে প্রত্যেক ব্যবসায়ী টেনশনে রয়েছেন। গত বছর সরকার যদিও ১৬ রমজান থেকে সীমিত পরিসরে মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয়, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে ব্যবসায়ীরা স্বাগত না জানিয়ে মার্কেট বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলো। কারণ তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদ বাজার নিয়ে আগ্রহ ছিল না।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সারা বছরের মোট বেচাবিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশই হয় রমজানে। গত বছর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আমরা আশায় বুক বেঁধেছি, এবার হয়তো সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা খুবই বিচলিত। টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান বলেন, গত বছর আমরা হাজার কোটি টাকার ঈদ মার্কেট হারিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য অনেক ব্যবসায়ী ধার দেনা করে পণ্য কিনেছেন। কিন্তু এখন আবার করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের টেনশনও বেড়ে যাচ্ছে। গত ঈদেও আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে সেই সময় লকডাউনের কারণে মানুষ আর মার্কেটমুখী হয়নি। জামা কাপড়ের ক্ষেত্রে প্রতি বছরই ফ্যাশনের পরিবর্তন হয়। গত বছর যেসব জামা কাপড় অবিক্রিত রয়ে গেছে, সেগুলো এবার বিক্রির সুযোগ পাবো কিনা বুঝতে পারছি না। তবে সরকারের কাছে আমাদের দাবি- অন্তত সীমিত পরিসরে হলেও যেন মার্কেট চালু রাখে। আমরা ইতোমধ্যে সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছি। যেসব ক্রেতার মুখে মাস্ক নেই, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আমরা প্রত্যেক ক্রেতাকে স্যানিটাইজ করে তারপর প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ নিশ্চিত করছি।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদ ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, করোনার প্রকোপ বাড়ার কারণে আমরা খুব টেনশনে আছি। গত বছর করোনায় ঈদ বাজার হারিয়েছিলাম। কারণ জীবন ও জীবিকা দুটোই আমাদের রক্ষা করতে হবে। গত দুই মাস আগেও ভেবেছিলাম, এবার হয়তো পরিস্থিতি আগের মতো হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। রজমানের বাকি আছে আর দুই সপ্তাহ। সারা বছরের মধ্যে এই একমাসই ব্যবসা হয়। এখন সরকার কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটিও বুঝতে পারছি না। তারপরও আমরা ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধষষ্ঠ ধাপে ভাসানচর যাচ্ছে আরও ৪ হাজার রোহিঙ্গা
পরবর্তী নিবন্ধমহামারি থেকে সুস্থতা কামনা