ই-কমার্স প্রতারণা : গ্রহণ করতে হবে প্রযুক্তির ইতিবাচক সকল দিক

| বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করেছে। ওই তালিকায় এখন পর্যন্ত ৬০টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান তাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। গত ১২ অক্টোবর ‘ই-কমার্স প্রতারণা : ৩০ প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে’ শীর্ষক দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এ তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত ও নজরদারিতে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দেয় না, টাকাও পরিশোধ করে না। তারা প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদেরই আমরা নজরদারিতে রেখেছি।
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ই-কমার্সের বিস্তার ঘটছে দ্রুত। করোনা মহামারির সময় এ খাতে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুণ।একইসঙ্গে বেড়েছে ই-কমার্সে উদ্যোক্তার সংখ্যাও। কিস্তু দুঃখের বিষয়, অনলাইনে এ ব্যবসা-মাধ্যমটির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রতারণাও। সামপ্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর অনলাইন কেনাকাটায় আস্থা সংকটে ভুগতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।
ই-কমার্স প্রতারণা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেভাবে উৎকণ্ঠিত, ঠিক তেমনটি সরকারের মধ্যে উদ্বেগ আছে বলে মনে হয় না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সরকারি সংস্থাগুলোর বক্তব্য আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি। তারা বলেছে, ‘ইভ্যালিসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসার যে মডেল অনুসরণ করেছে, তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি ছিল এবং এতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেশিসংখ্যক ক্রেতা থেকে টাকা নিয়ে ব্যাপক ছাড়ে কমসংখ্যক ক্রেতাকে পণ্য সরবরাহ করে মানুষকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে প্রতারণা করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। এটি প্রচলিত আইনে অপরাধ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের অপরাধের দায়িত্ব সরকার বা কোনো সংস্থা নেবে না’। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্য এসেছে গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশে নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ সৃষ্টি করা মন্ত্রণালয়ের কাজ। কোনো ব্যবসা খাতের জন্যই আলাদা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নেই। দেশে কোম্পানি নিবন্ধন, পণ্য ও খাদ্যমান, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা এবং সুষ্ঠু লেনদেন নিশ্চিত করার জন্য আলাদা আলাদা সংস্থা কাজ করছে। এ ছাড়া শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাসহ প্রচলিত অন্যান্য আইন বাস্তবায়নে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ। ক্রেতা বা ব্যবসায়ী যদি মনে করেন তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাহলে এসব সংস্থার কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে কোনো কোম্পানির দায়দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিতে হবে, বিষয়টি তেমন নয়।’ ‘ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দায়ভার সরকার নেবে না’ বলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের কথাগুলোকে গ্রহণ করেও আমরা বলতে চাই, কথাগুলো দায়িত্বপূর্ণ বক্তব্য হতে পারে না। গ্রাহকেরা কম মূল্যে পণ্য কেনার লোভ সংবরণ করতে পারেননি এবং তাই তারা কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটা ক্রেতাদের দায়। সরকার এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট না হলেও সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতিকে দমন করার দায়িত্বও তো তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কোনো দায়িত্ব না নেওয়ার ঘোষণা প্রতারকদের উৎসাহিত করার সামিল। যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। ৩০ প্রতিষ্ঠানকে শুধু নজরদারিতে রাখলে হবে না, তদন্তপূর্বক শাস্তিও প্রদান করতে হবে। নইলে এরকম আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠবে।
সমপ্রতি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির কারণে ই-কমার্সের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না, তবে দু-একটা কোম্পানির জন্য পুরো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটা আমরা চাই না। প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক ব্যর্থ হোক, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখন ই-সময়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা নীতিমালা সহসা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সমস্ত ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় এনে কাজ করতে হবে। কেননা প্রযুক্তির এ সময়ে ই-কমার্সের কোনো বিকল্প নেই। সামনের দিনগুলোতে সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নীতিমালা মেনে চলবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবে-এমনটা আশা করি আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে