ইরানের হামলার জবাব দেওয়া নিয়ে চাপে নেতানিয়াহু

| বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মত ইসরয়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। তেল আবিব কীভাবে তার জবাব দেবে সে প্রশ্ন সবার মনে। ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা এখন পর্যন্ত তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো ধরনের ইঙ্গিত দেয়নি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো চাইছে, এক্ষেত্রে ইসরায়েল সংযম প্রদর্শন করচক। খবর বিডিনিউজের।

নতুবা পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। ইরান গত শনিবার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। যদিও সেগুলোর ৯৯ শতাংশই ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে ড্রোন হামলার জবাব দিতে ইরান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে। ইসরায়েল ইরানি কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তারাই ওই হামলা চালিয়েছে বলে বিস্তৃতভাবে ধারণা করা হয়। চিরশত্রুর হামলার শিকার হওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি কথা বলছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যেটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। তিনি এখন পর্যন্ত ইরানের হামলার বিরুদ্ধে তার দেশ কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে চলেছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি। ইরানের ওই হামলার পর ইসরায়েলের পাশে দৃঢ়ভাবে অবস্থানের কথা জানিয়েছে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে সঙ্গে এও বলেছে যে, তারা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে অংশ নেবে না এবং তারা এ ধরণের পদক্ষেপের সমর্থনও করে না। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ ইসরায়েলের অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও একই সুরে কথা বলেছে। এদিকে, দেশের ভেতর বেশ কয়েকজন রাজনীতিক নেতানিয়াহুর প্রতি ইরানের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার রাতেই জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী আইটামার বেন জভির কঠোর পাল্টা জবাবের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এঙ এ এক পোস্টে তিনি লেখেন, এখন পর্যন্ত প্রশংসনীয় প্রতিরক্ষাৃএখন অবশ্যই একটি গুঁড়িয়ে ফেলার মতো পাল্টা জবাব চাই। তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই।

শনিবার রাতের ওই হামলার পর সোমবার পর্যন্ত নেতানিয়াহু তার যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সঙ্গে দুই বার বৈঠক করেছেন। ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। কিন্তু রোববারের পর তিনি এ বিষয়টি নিয়ে জনসম্মুখে আর কোনো কথা বলেননি।

শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এঙ এ একটি ছোট পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। নেতানিয়াহু কিছু না বললেও ইসরায়েলের সেনাপ্রধান হারজি হালেভি সোমবার সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ইরানের হামলার ‘জবাব দেওয়া হবে’। তবে তিনি কখন বা জবাব কেমন হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক গবেষক রাজ জিমত বলেন, নজিরবিহীন এই হামলার কারণে এটির জবাব দেওয়া নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি সরকার প্রচণ্ড চাপে রয়েছে।

এমন কী যদি তারা একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে নাও চায় তারপরও ওই হামলার একটি নির্দিষ্ট এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর চাপ তারা এড়িয়ে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। এক্ষত্রে যদি আমার মতামত নেওয়া হয় তবে আমি দায় স্বীকার না করে ইরানে ইসরায়েলের কিছু কর্মকাণ্ড দেখা পছন্দ করবো।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং এমনকি আঞ্চলিক মিত্র জর্ডান ইসরায়েলকে ইরানের হামলা প্রতিহত করতে সাহায্য করেছে। যদি তারা সাহায্য না করতে তবে অত্যাধুনিক আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম নিয়েও এতটা সফল ভাবে ইসরায়েল নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে সক্ষম হতো না। ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষায় সহায়তা করা ওইসব পশ্চিমা দেশও তেল আবিবকে উত্তেজনা না বাড়াতে সতর্ক করেছে।

এমনকি ইরানও বলেছে, তারা এই হামলার পর বিবাদের অবসান হয়েছে বলে ধরে নিয়েছে। যদি না ইসরায়েল আরেকটি ভুল না করে। যদি ইসরায়েল পাল্টা হামলা করে তবে আরো ‘গুরচতর জবাব’ দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছে তেহরান। গাজা যুদ্ধের কারণে এমনিতেই আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরচ করেছে ইসরায়েল। এ অবস্থায় পশ্চিমা মিত্রদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছত্তিশগড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শীর্ষ নেতাসহ ২৯ মাওবাদী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধ‘ইসরায়েল হামলা চালালে সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান’