ইভ্যালির ভবিষ্যৎ কী

অফিস বন্ধ, তহবিল নেই, মালিকরা কারাগারে

| রবিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অফিসগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে আলোচিত ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। গতকাল শনিবার ফেসবুক ভেরিফায়েড পাতায় ইভ্যালি ঘোষণা দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ইভ্যালি এমপ্লয়িগণ নিজ নিজ বাসা থেকে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পাওনা টাকা বা পণ্যের দাবিতে ইভ্যালির অফিসগুলোয় গ্রাহকদের বিক্ষোভ করার পর তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কারাগারে, অফিস বন্ধ, ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইভ্যালির এখন কী হবে? খবর বিবিসি বাংলার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ইভ্যালির দেনা ৫৪৩ কোট টাকা। প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক রয়েছে দুই লাখের বেশি। তবে প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে ১শ কোটি টাকারও কম সম্পদ।
অসংখ্য গ্রাহক ফেসবুক, ইভ্যালির পাতা ও টেলিফোনে জানান, বহুদিন আগে তারা পণ্যের জন্য টাকা দিলেও এখনো পণ্য বা টাকা কোনোটাই ফেরত পাননি। এমনকি ইভ্যালির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়ে আসছে, ছয় মাসের মধ্যে তারা সকল পেন্ডিং অর্ডার শূন্যে নামিয়ে আনবে। তবে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার হওয়ার পর অফিসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ই-কমার্সের মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের গ্রাহক, মার্চেন্ট, পণ্য প্যাকিং ও সরবরাহের কাজ করতে হয়, তাদের পক্ষে হোম অফিস থেকে কীভাবে এসব কর্মকাণ্ড চালানো হবে, তা পরিষ্কার নয়।
শুক্রবার একটি পোস্টে ইভ্যালি জানিয়েছে, তাদের প্রধান দুজন সিগনেটরি সিইও ও চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেলারদের নিয়মিত বিল দিতে পারছে না। এই কারণে স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রমও বিলম্বিত হচ্ছে। এসব কারণে ১৭ সেপ্টেম্বরের সকল অর্ডার রিকোয়েস্ট হিসাবে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্র এ সকল অর্ডার কনফার্ম করা হবে।
অর্ডার নিশ্চিত করলে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশ মূল্য অগ্রিম জমা দিতে হত। ফলে এই ঘোষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম যে একপ্রকার থমকে গেছে, সেটাই পরিষ্কার হয়েছে। এদিকে বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের কারণে অসংখ্য মানুষ আর্থিকভাবে ঝুঁকির মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি সামলাতে সেসব প্রতিষ্ঠানে আদালতের আদেশে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে সরকার। প্রশাসক সরকারের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে। এ সময় গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন প্রশাসকরা। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, বিষয়টি এখন আইনি পর্যায়ে রযেছে। সবার আগে এখন গ্রাহকদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান বলেন, সরকার চাইলেই প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। আদালত যদি আদেশ দেয়, তখন সরকার সেটি পালন করবে। তার পরামর্শ, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানিয়ে রাখা উচিত। তাহলে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হলে এটা তাদের সুবিধা দেবে।
প্রসঙ্গত, তিন বছর আগে গড়ে ওঠার পর লোভনীয় অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপনে দ্রুত আলোচনায় আসে ইভ্যালি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ফেরা হলো না, যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন আফগান শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধসীমার অসীম যাত্রা