ইংল্যান্ডের প্রথম নাকি ইতালির দ্বিতীয়

ইউরো কাপের ফাইনাল আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ১১ জুলাই, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালে ফুটবল ভক্তদের দারুণ সময় কেটেছে দুটি টুর্নামেন্ট দেখে। একটি ইউরো কাপ এবং অন্যটি কোপা আমেরিকা। দুটি টুর্নামেন্টেরই ফাইনাল আজ রোববার। কাজেই বাংলাদেশের ফুটবল পিপাসুরা টিভি পর্দায় চোখ রাখবেন নান্দনিকতায় ভরা এ দুটি ফাইনাল দেখতে। তবে এই পত্রিকা যখন পাঠকের হাতে পৌঁছবে, ততক্ষণে শুরু হয়ে যাবে কোপা আমেরিকার ফাইনাল।
আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ছয়টায় শুরু হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ। এরপর দিন পেরিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এতে লড়বে স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং অন্যতম ফেভারিট ইতালি। ইংল্যান্ডের প্রথম নাকি ইতালির দ্বিতীয়।
ডেনমার্ককে সেমিফাইনালে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। দলটি নিয়ে প্রত্যাশার ডানা মেলতে শুরু করেছে আরো আগে থেকে। আসরের শুরুটা যদিও তেমন ভালো হয়নি, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে দলটি। সব বাধা পেরিয়ে এবার চূড়ায় ওঠার পালা তাদের। এদিকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকে ইতালিকে ফেভারিট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। মাঠে ঠিক তেমনই ফুটবল উপহার দিয়েছে দলটি। অপরাজিত থেকে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। মেজর টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ইতালি একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে মোট চারবার। আর প্রতিবারই ইংলিশদের হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছে ইতালিয়ানরা। ৫৫ বছরের মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা খরা কাটিয়ে প্রথম শিরোপা জিততে ইংলিশদের তাই প্রথমবারের মতো হারাতে হবে ইতালিকে। ইউরো সেরার মঞ্চে রোমাঞ্চকর এ লড়াই অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ম্যাচটিকে সামনে রেখে দু’দলই ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।
ফাইনালে ইংল্যান্ড এবং ইতালি উভয় দলই তাদের সেমি-ফাইনালের ফরমেশন ধরে রাখবে। টুর্নামেন্ট জুড়েই রবের্তো মানচিনির ইতালি ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলেছে। তাই ফাইনালেও পছন্দের ফরমেশনেই দলকে সাজাতে চাইবেন তিনি। অপরদিকে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও হয়তো নিজের ধরনের ওই একই কৌশল রাখবেন। মাঝমাঠের লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবেই এগিয়ে থাকবে ইতালি। আসরের শুরু থেকেই এই পজিশনে আলো ছড়াচ্ছেন চেলসি মিডফিল্ডার জর্জিনিয়ো। টুর্নামেন্টে ইতালির অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। তার দুই পাশে থাকবেন মার্কো ভেরাত্তি ও নিকোলো বারেল্লা। তিনজনই বল পায়ে স্বছন্দ এবং বল ধরে রেখে খেলতে দক্ষ। তবে ইংল্যান্ডের মিডফিল্ড কিছুটা রক্ষণাত্মক। ডেকল্যান রাইস ও ক্যালভিন ফিলিপস অনেকটা রক্ষণাত্মক মানসিকতার। তারা দুজন মূলত মিডফিল্ডারের কাজ করেন, যা জমাট ইংলিশ রক্ষণকে আরও শক্ত করে। আর আরেক মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ট সুযোগ তৈরি ও আক্রমণভাগের সঙ্গে সমন্বয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ইতালির মিডফিল্ডাররা দ্রুত বল সামনে বাড়িয়ে খেলতে পছন্দ করে। আর রাইস ও ফিলিপস সময় নেন এবং পাস দেওয়ার ব্যাপারে থাকেন সাবধান। মানচিনি চাইবেন, তার দল যেন মাঝমাঠে শুরু থেকেই প্রভাব বিস্তার করে এবং রাইস ও ফিলিপসকে আরও পেছনে নেমে যেতে বাধ্য করে। ইতালির লক্ষ্য থাকবে চাপ ধরে রাখা যেন ইংল্যান্ড একদম নিচ থেকে খুব বেশি আক্রমণে উঠতে না পারে। মাঝমাঠে ইতালির প্রাধান্য থাকলেও ইংল্যান্ডের আক্রমণের সেরা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে মাঠের দুই পাশ থেকে, যেখানে তাদের দুই ফুলব্যাক আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
জর্জো কিয়েল্লিনি ও লিওনার্দো বোনুচ্চি ইতালির ক্লাসিক রক্ষণের দুই প্রতীক। জুটি হিসেবে তারা দুর্দান্ত, তাদের মাঝে বোঝাপড়া ভালো, ম্যাচ পড়তে পারেন, মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় অবস্থান নেন এবং শারীরিকভাবেও তারা শক্তিশালী। ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন সাধারণত প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাইরে এবং তাকে মার্কিংয়ে থাকাদের চেয়ে দূরে থেকে আক্রমণে ওঠেন। তার উদ্দেশ্য থাকে ডিফেন্ডাররা যেন তাদের জায়গা ছেড়ে বের হয়ে আসে এবং তাতে স্টার্লিং, মাউন্ট ও সাকার জন্য ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।
ইতালির রক্ষণের ঘাটতির জায়গা তাদের গতি যা ইংল্যান্ডকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে, তবে কিয়েল্লিনির সঙ্গে দ্বৈরথে যেতে কেইন হয়তো পিছপা হবেন না। বরং হয়তো আশায় থাকবেন, লড়াইয়ে শারীরিকভাবে ছোঁয়াটা একটু বেশি হয়ে গেলে ফ্রি-কিক কিংবা পেনাল্টিও পাওয়ার।
আসরজুড়ে ইংল্যান্ডের ডিফেন্সিভ জুটি হ্যারি ম্যাগুইয়ার ও জন স্টোনস আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল হজম করা ইংলিশ রক্ষণের বিপক্ষে ইতালি ফরোয়ার্ড চিরো ইম্মোবিলকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। তবে ইতালির আক্রমণ তখনই বেশি কার্যকর হয় যখন দুই পাশের খেলোয়াড়রা চাপ বাড়ায় এবং তাতে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। ফলে ইম্মোবিল আটকে গেলেও উঠে আসা অন্যরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। ডান পাশের ফেদেরিয়ো চিয়েসা এবং বাম পাশের লরেন্সো ইনসিনিয়ে প্রায়ই মাঝ বরাবর দিয়ে আক্রমণে যান আর বারেল্লাও যখন তাদের সঙ্গে যোগ দেন তখন ইতালির আক্রমণের ধার বেড়ে যায় আরও।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের এই ফাইনালে নিরঙ্কুশ ফেভারিট কাউকে বলা যাবে না। শিরোপার লড়াইয়ে দুই দলই কোনো অংশে কম নয়; তবে ইতালি যদি মাঝমাঠে আধিপত্য ধরে রাখতে পারে এবং ইংল্যান্ড যদি দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে উঠতে পারে, তাহলে ম্যাচটি হবে উপভোগ্য। বড় ম্যাচের মত এই ম্যাচেও লড়াইটা হবে তীব্র এবং শেষ পর্যন্ত যে কেউ মুহূর্তের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। এর ফয়সালা হবে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের ইংল্যান্ড-ইতালি দু’দলের ফাইনালের পর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ছিনতাই নাটক
পরবর্তী নিবন্ধকোভিড মোকাবিলায় তথ্য নয় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করুন : টিআইবি