আড়ালের মানবসেবীদের খুঁজে পুরস্কৃত করুন : প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামের ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াসহ ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ২টি প্রতিষ্ঠান নিল স্বাধীনতা পুরস্কার

| শুক্রবার , ২৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

দেশ ও মানুষের কল্যাণে যারা আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, কখনও নিজেকে প্রকাশ্যে আনেন না, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে অনেক মানুষ পড়ে আছে, যারা মানুষের সেবা করে নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরকেও পুরস্কৃত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের। স্বাধীনতা পদক পাওয়া গুণীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন। হয়ত তারা কখনো প্রচারে আসে না। তারা দৃষ্টি সীমার বাইরে থাকে। তাদেরকে খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করা উচিত এই কারণে যে, তাদের দেখে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও শিখবে, অন্যরাও শিখবে। মানুষের সেবা করার মধ্যে দিয়ে, মানুষের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, হাজার ধন সম্পদ বানালেও সেটা হয় না, সেটা আসে না।
স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি এই স্বাধীনতা আমাদের ধরে রেখে এর সুফলটা প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছাব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদেশকে আমরা এমন ভাবে গড়ে তুলব, বাঙালি জাতিকে যেন আর কখনও বিশ্বের কারও কাছে মাথা নত করে চলতে না হয়। মাথা উঁচু করে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব এবং মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে আমরা এগিয়ে যাব।
দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, এ যাত্রা যেন অব্যহত থাকে, সমগ্র জাতির কাছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে সেটাই আমরা আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে। ‘শতভাগ বিদ্যুতায়নের’ মত দেশে একদিন কোনো গৃহহীন মানুষও থাকবে না আশা করে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে এসে তার (বঙ্গবন্ধুর) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর বানানোর কাজ শুরু করি। এখন খুব অল্প লোকই বাকি আছে। ইনশাল্লাহ এমন দিন বাংলাদেশে আসবে যে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটা আমরা করতে সক্ষম হব।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা পদক প্রদান : প্রধানমন্ত্রী তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ বিতরণ করেন। তিনি মঞ্চ থেকে নেমে জীবিত দুই মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুদ্দীন আহমেদ ও আব্দুল জলিলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ ছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম) ছাড়াও মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং সিরাজুল হক (মরণোত্তর) ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। ‘চিকিৎসাবিদ্যায়’ পুরস্কার পেয়েছেন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম এবং ‘স্থাপত্যে’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও মুজিব বর্ষে বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নে সাফল্যের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপ্তকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং একটি সম্মানী চেক প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় ও অসাধারণ অবদানের জন্য ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্ত্বি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ এর জন্য চূড়ান্ত করে সরকার। পরবর্তীতে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য মনোনীত আমির হামজার নাম তুমুল বিতর্কের কারণে বাদ দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেপ ভারতীয় শিক্ষা মেলা শুরু আজ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা