আড়াই বছর ধরে শিকলে বন্দি

কীভাবে সুস্থ জীবনে ফিরবে শিশু মাইন উদ্দিন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

লম্বা শিকলের এক অংশ কোমরের সাথে বাঁধা। অন্য অংশ ঘরের খুঁটির সাথে বাঁধা। গত আড়াই বছর ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় কাটে তার প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম। যে সময়ে তার বয়সীরা এই বাড়ি থেকে ওই বাড়ি ছুটে চলে, খেলাধুলা করে আর বই হাতে স্কুলে যায় সে বয়সে শিকলে বন্দি জীবন কাটে মো. মাইন উদ্দিনের (৯)।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের অযোধ্যা মোড়ের বাসিন্দা চা দোকানি মো. আলম মিয়া ও ফাতেমা বেগম দম্পতির ছেলে মাইন উদ্দিন। জানা গেছে, জন্মের ১৮ মাস বয়সে জ্বর হয়েছিল মাইন উদ্দিনের। কবিরাজের পানি পড়া, ঝাড়ফুঁকে জ্বর সারলেও শরীরে খিঁচুনি হতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করানো হয়। এভাবেই চিকিৎসা চলে সাড়ে তিন বছর।
ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন পাঁচ সন্তানের জনক আলম মিয়া। তিনি বলেন, চা দোকানের আয় দিয়ে চলে আমার ছেলের চিকিৎসা আর সাত সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ ছাড়া আর কোনো সরকারি সাহায্য জুটেনি। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসায় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের
সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তিনি বলেন, চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে মাইন উদ্দিন। অকারণে প্রতিবেশী শিশুদের মারধর করে। প্রতিবেশীদের বাড়িঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। আবার মাঝে মাঝে বাড়ি
থেকেও হারিয়ে যায়। এর পরপরই মানসিক প্রতিবন্ধী সন্দেহে প্রতিবেশীদের পরামর্শে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছি। তিনি জানান, মাইন উদ্দিন সবসময় হাউমাউ করে, কিন্তু মুখ ফুটে কোনো কথা বলতে পারে না।
বেলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রহমত উল্লাহ জানান, শিশুটির নামে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে শিশুটির চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয় পরিষদের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা. পরাগ দে বলেন, অপচিকিৎসার কারণেই এমনটা হয়েছে। এভাবে বেঁধে রাখা অমানবিক। চিকিৎসায় শিশু মাইন উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃলা দেব বলেন, মাইন উদ্দিনের নামে সুবর্ণ কার্ড ও প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার বাবা আবেদন করলে অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউখিয়া ও টেকনাফে চার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক
পরবর্তী নিবন্ধবিএসআরএম স্টিল মিলে ডাকাতের হানা