আল- মানাহিল ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানবিক ধর্মের অনন্য উদাহরণ

হৈমন্তী তালুকদার | সোমবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

করোনা যখন পুরো পৃথিবীতে মৃত্যুর মিছিল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, তখনও মানবতার আচরণ আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো, আমরা তখনও নিজ ধর্মের মানুষের পাশে, নিজ পরিবার ও পরিজনের সাথে কতোটা মানবিক আচরণ করেছি সেটাও এখন ভাববার বিষয়। কারণ ধর্ম বিষয়টা সবসময়ই যেন আমাদের কর্মের সাথে যেন আবদ্ধ থাকে। আল -মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন একটি সেবামূলক কার্যক্রমের অনন্য উদাহরণ। এর চেয়ারম্যান হালাল উদ্দিন বিন জমিরউদ্দীন। তাদের সেবামূলক কার্যক্রম শুধু নিজ ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, করোনায় যতোগুলো রোগী মারা গিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মুসলমানদের কবর দিয়েছিলেন দূর দূরান্তে গিয়ে রাতের আঁধারে, ঝড় বৃষ্টিতেও। ঠিক তেমনি অন্য ধর্মের মানুষের পাশেও ছিলেন, এছাড়াও তিনি রমজানে ও দুস্থ মানুষের ইফহার সেহেরীর আয়েজন করে থাকেন বিনামূল্যে এমনকি বৌদ্ধ, হিন্দুদের করোনা রোগীর লাশ তারা মুসলমান হয়েও সৎকার করেছিলেন। এটা কি মানবতার একটি অন্যন্য উদারতা নয়? ধর্ম যদি এতোই আপন হয়, তাহলে আল-মানাহিল সংগঠনের কাছে গিয়ে হিসাব নিতে হবে, তারা কতো সংখ্যালঘুদের করোনার লাশ পুড়িয়েছিলেন। যেখানে এমনও করুণ ঘটনা ঘটেছিলো একজন মা তার ছেলের লাশ নিয়ে পুরোরাত একা কাটিয়েছিলো। একজন জীবনসঙ্গী একাই তার বরের লাশ দাহ করেছিলেন আল -মানাহিলের সহযোগিতায়। আমাদের চাদঁগাও বৌদ্ধ বিহারের শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু এস. লোকজিৎ থের শতো বড়ুয়াদের দাহকার্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনিও বলেছিলেন সব ধর্মে সবার আগে মানবিকতা বোধ থাকতে হবে। আমার ধর্মের মানুষের ও মানবতার কমতি আছে, তিনি নিজে উপলব্ধি করেছিলেন যখন একটা সৎকারে একজন মা আর তার ছেলে ছাড়া কোন আত্মীয়কে তিনি দেখতে পাননি এবং তিনি একজনই ভিক্ষু ছিলেন সংঘদানে যা মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য পুণ্যদান করেছিলেন। এরপর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কথা যদি বলি। মানবতার কাজ শুরু করেছিলেন একজন হিন্দু , কিশোর কুমার দাশ এক টাকার আহারে তাঁর মানবিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সব ধর্মের মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটানোর কাজ শুরু করেছিলেন, রমজানে মাসেও দুস্থ মানুষের সেহেরি ইফতারের খাবার পৌঁছে দিয়ে থাকে তার সংঘটনের স্বেচ্ছাসেবক দল। দশটাকায় নতুন জামা কেনার আনন্দে সেখানে তিনি সব ধর্মকে সম্মান দিয়ে কাজ করছেন।সকল ধর্মের স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে। করোনায় আরো উল্লেখযোগ্য পুরান ঢাকায় টিপু সুলতান রোডে বেলাল খান নামে একজন মুসলমান হয়ে তিনি তার হোটেলে তিনহাজার মানুষের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সাথে মিলিত হয়ে বিনামূল্যে মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা করে আসছেন। তাই ধর্মীয় আচার-আচরণ নিজ কর্মের মধ্যে নিহিত রেখে আমাদের উপরোক্ত উদাহরণগুলো মনে ধারণ করে, আল-মানাহিল, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দুজন দু ধর্মের ধারকের কথা চিন্তা করে অসামপ্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমগ্র দেশের জন্য, সব ধর্মের মানুষের জন্য মানবতার আচরণ নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে হবে। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ বুঝিনা, ধর্মের সঠিক চেতনায় সকলকেই নিয়ে বাংলাদেশী হিসেবে আমরা সবাই নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, অসহায় মানুষদের উপর অহেতুক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। সঠিক বিচার করে আইনের শাসনে সকলের ভরসা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অসামপ্রদায়িক চেতনায় ধর্ম যার যার উৎসব সবার কথাটার সত্য প্রতিফলন দেখতে চাই। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের নিরাপদ জীবন চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ অপশক্তির উৎপত্তি কোথায়?
পরবর্তী নিবন্ধধার্মিকেরা অন্য ধর্মের ক্ষতি করতে পারে না