আর মাত্র ১০ ভাগ কাজ বাকি

বঙ্গবন্ধু টানেল ।। ডিসেম্বরে খুলে দিতে রাতে-দিনে চলছে কাজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

আর মাত্র ১০ ভাগ কাজ শেষ হলেই চালু হবে চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশার কর্ণফুলী তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক ১০টি মেগা প্রকল্পের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যে রাতে-দিনে কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিসেম্বরে টানেল চালু করে দেয়া হবে। টুকটাক কিছু কাজ বাকি থাকলে তা পরে সম্পন্ন করা হবে। টানেলের মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন তারা।
টানেলটি চালু হলেও শুরুতে এর সুফল কতটুকু মিলবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে ইন্টারসেকশন এবং সংযোগ সড়কগুলো পুরোপুরি নির্মিত না হওয়ায় টানেলের যান চলাচল কিছুটা হোঁচট খাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নদীর দক্ষিণ পাড়কে মূল শহরের সাথে যুক্ত করাসহ আবাসন, শিল্পায়ন ও পর্যটনে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই ব্যয় আরো বেড়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং করোনাকালের ধাক্কায় প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি পায়।
সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চীন সরকারের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল) টানেলটি নির্মাণ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলীর তলদেশে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। চার লেনের এই টানেলের দুটি টিউবের একটি দিয়ে দুই লেনের গাড়ি নদীর এপাড় থেকে ওপাড়ে যাবে। অপর টিউব দিয়ে দুই লেনের গাড়ি অপর পাড় থেকে শহরের দিকে আসবে। মূল টানেলের সঙ্গে উভয় প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুন উর রশিদ গতকাল আজাদীকে বলেন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৮৮.৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে আরো অনেক কাজ হয়েছে। আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টানেল খুলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, শুধু আমরা নই, এই প্রকল্পের সাথে বিভিন্ন সংস্থা জড়িত। সবাই নিরলসভাবে কাজ করছে। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল পুরোদমে চালু করা সম্ভব হবে।
মূল টানেল নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হলেও ইন্টারসেকশন এবং সংযোগ সড়কগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে। টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও পুরো সুফল পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
পতেঙ্গা এলাকায় ইন্টারসেকশন ডিজাইন করা হলেও এখনো কাজ শুরু করা হয়নি। এতে করে টানেলের গাড়ি চলাচল ব্যাহত হবে। পতেঙ্গা সৈকত ও স্থানীয়ভাবে চলাচলকারী গাড়িগুলো টানেলের গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। পতেঙ্গা এলাকায় ইন্টারসেকশনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি। স্থানীয় গাড়িগুলোর সাথে দূরপাল্লার গাড়ির জটলা তৈরি হলে টানেলের সুফল মিলবে না।
অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন শিকলবাহা-আনোয়ারা টানেল সংযোগ সড়ক নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানো না হওয়ায় শিকলবাহা আনোয়ারা সংযোগ সড়ক সমপ্রসারণের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। খুঁটি সরানোর প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করার পরও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ২৪৩টি খুঁটি সরিয়ে নেয়নি। খুঁটিগুলো সরিয়ে না নেয়ায় নির্ধারিত সময়ে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পত্র দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কয়েকশ খুঁটি সরিয়ে নিয়েছি। এখনো কিছু খুঁটি রয়ে গেছে।
অবশ্য টানেলের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুন উর রশিদ বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলে চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিকভাবে শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি, সংযোগ সড়কের কাজ ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউ পালন করতে পারেনি কর্মসূচি