আর কত প্রাণ হারালে খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হবে

| সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নগরী। অনেকে বলে থাকেন বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু এই নগরটি কতটা অবহেলিত অবস্থায় আছে, এখানে নাগরিক সেবা কতটা উপেক্ষিত, তা বোঝা যায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। গত ২৩ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে এমন একটি প্রতিবেদন, যেটিতে স্পষ্ট হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর সমন্বয়হীনতা। বোঝা গেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কত অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা। ‘এখনো অরক্ষিত খাল-নালা/নগরে বেষ্টনী ছাড়া খালপাড় আছে ১৯ হাজার মিটার, ৫ হাজার ৫২৭ স্থানে উন্মুক্ত নালা, ২৫ দিনে চার দুর্ঘটনা, বর্ষা ঘনিয়ে আসায় বাড়ছে উদ্বেগ’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরের ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা ও খালের একটি তালিকা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার।

এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে; যেগুলো মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত। গত বছর অক্টোবরে এ তালিকা করলেও এখনো স্ল্যাব বা নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি চসিক। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় সিডিএ যেসব খালে কাজ করছে সেখানেও নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী। অবশ্য যেসব খালে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে সেখানে রেলিং নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ এবং স্ল্যাব বসানোর কাজ চলমান। ইতোমধ্যে ২৫ হাজার স্কয়ার ফিট স্ল্যাব বসিয়েছি এবং ১৫ হাজার স্কয়ার ফিট বেষ্টনি বা রেলিং দিয়েছি। তিনি বলেন, প্রতিটি সংস্থা যদি সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে তাহলে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

এদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ দিনে অরক্ষিত খাল-নালায় শিশুসহ ৪ জন পড়ে গিয়ে আহত হন। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রাতে খতিবের হাটের চান মিয়া সড়কের পাশে নয়া মির্জা খালে এক কিশোরী পড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। এর আগে ১৫ এপ্রিল সকালে চান্দগাঁওয়ের বালুরটাল এলাকার একটি খালে এক নারী পড়ে যায়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশনের কর্মীরা এসে তাকে জীবিত উদ্ধার করে।

সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধির মধ্যে যেসব কাজের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর বিভিন্ন ভাগ ও উপ-ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, জন্ম মৃত্যু ও বিয়ে রেজিস্ট্রি, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা, পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রণালী, বৈদ্যুতিক বাতি ও পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা এবং অন্যান্য যোগাযোগের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি। আমরা গতকাল প্রশ্ন উত্থাপন করেছি, নগরবাসী কি সিটি করপোরেশন থেকে পরিপূর্ণ সুবিধা পাচ্ছেন? কেমন পাচ্ছেন নাগরিক সুবিধা? এ প্রশ্নের উত্তরে নগর পরিকল্পনাবিদদের বক্তব্য হলো, নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে না। তাঁরা যে কর প্রদান করছেন, সে হিসেবে সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁরা বলেন, একসময় পরিচ্ছন্ন নগরীর জন্য চট্টগ্রামের সুনাম করা হতো। এখন এ কাজে শ্লথ গতি। এছাড়া নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খেলার মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনাও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকলেও সেগুলোও ঠিকমত পালিত হচ্ছে না। তবে এর পেছনে কারণ হিসেবে শুধু সিটি কর্পোরেশনকে এক তরফা ভাবে দায়ী করতে চান না তাঁরা। এরজন্য নাগরিক দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা। তবে এটা ঠিক যে, মূল দায়টা সিটি কর্পোরেশনের।

নাগরিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নগরবাসী যে অবহেলার শিকার হচ্ছে, তাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের চলাচল। নগরবাসীর জীবন যে ঝুঁকির মুখে পড়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় একের পর এক যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তাকে কোনোভাবে স্বাভাবিক জীবনের অংশ ভাবা যায় না। অনেকে এক খুন বলে আখ্যায়িত করছেন। আর কত প্রাণ হারালে নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়া হবে- এটা এখন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে