আর্থ্রাইটিস : হাঁটু ব্যথা ও হাঁটু প্রতিস্থাপন

ডা. এ এইচ এম রেজাউল হক | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

হাঁটু ব্যথা একটি পরিচিত সমস্যা। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বেশ কিছু কারণও আছে, যার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের উন্নত জীবনযাত্রার কারণে পরিশ্রম কমে যাচ্ছে ফলে স্থুলতা বেড়ে যাচ্ছে, দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ঘটনা জনিত কারণে হাঁটু বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে ইত্যাদি। এছাড়া রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, গেটোবাত, ইনফেকশন, টিউমার ইত্যাদি কারণেও হাঁটু ব্যথা লক্ষ্যণীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় সম্ভব হলেও বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে হাঁটুর স্বাভাবিকতা ক্ষয় হতে থাকে। হাঁটুর এই ক্ষয় হওয়াকে অষ্টি ও আর্থ্রাইটিস বলা হয়। এর ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়, সাধারণ আকৃতির পরিবর্তন হয়, শব্দ হয়, স্থিরতা কমে যায়, জয়েন্ট মুভমেন্ট কমে যায় ও হাঁটু ব্যথা করে। এই সমস্যাগুলো শুধু যে বার্ধক্যতেই হয় তা নয়, মধ্যবয়স্কদেরও এটি হতে পারে। তাই সকলের উচিৎ অষ্টিও আর্থ্রাইটিস-কে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া।
অষ্টি ও আর্থ্রাইটিস হলে করণীয়- এই রোগ থেকে বাঁচতে ও হাঁটুকে সুস্থ রাখতে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তিনটি পর্যায়ে রোগ নিরাময় সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্যটি হলো হাঁটুর যথাযথ ব্যায়াম। চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে হাঁটুর সঠিক ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাবে। এছাড়া জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শরীরকে সচল রাখতে হবে ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ হলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ব্যথা থাকলে হাঁটুতে বেশি জোর না দেওয়া, ইত্যাদি দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এসবের মাধ্যমে হাঁটু স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরলেও হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পরবর্তীতে হাঁটু ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। দ্বিতীয় পর্যায়ে হাঁটুতে স্টেরয়েড, পিআরপি ইত্যাদি ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা যাবে ও চূড়ান্ত পর্যায়ে হাঁটুর সামঞ্জস্য বজায় রেখে অপারেশন করতে হবে।
হাঁটু প্রতিস্থাপন- এটি একটি সার্জিক্যাল প্রসিডিউর। এখানে ক্ষয়প্রাপ্ত অরুণাস্থি ও অস্থি একটি নির্দিষ্ট মাপে কাটা হয়। অতঃপর মাপ অনুযায়ী হাঁটুর জয়েন্ট হিসেবে উক্ত স্থানে মেটাল বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। মূলত এটিই হাঁটু প্রতিস্থাপন। এটি তিন ধরনের হয় ১) অংশত হাঁটু প্রতিস্থাপন, হাঁটুর যেই অংশ ক্ষয় হয়েছে তা পরিবর্তন করা ২) পূর্ণ হাঁটু পরিবর্তন, হাঁটুর দুই হাড়ের প্রান্তভাগ প্রতিস্থাপন করা ৩) পুনরায় হাঁটু প্রতিস্থাপন, প্রতিস্থাপিত হাঁটু পুনরায় প্রতিস্থাপন করা।
হাঁটু প্রতিস্থাপনের ছয় সপ্তাহের মধ্যেই রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। আমাদের দেশে এভারকেয়ার হাসপাতালে সবচেয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়। তাই রোগ নিয়ে চিন্তিত না হয়ে সবার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক সার্জারি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরে তরুণীর আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে অটিজম হোম ও বৃদ্ধাশ্রমের স্থান পরিদর্শন