আরকান রাজ্যে চট্টগ্রামের কবি : বাংলা কবিতার নিঃশঙ্ক স্বাধীন অভিপ্রকাশ

ড. ইলু ইলিয়াস | মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

আরকান রাজ্যে চট্টগ্রামের কবি-এ প্রসঙ্গে প্রবেশের পূর্বে আরকান ও চট্টগ্রামের সম্পর্ক সূত্রটি সুস্পষ্টভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শুরু করে মোগল আমলের শেষ অবধি, মধ্যখানের কয়েকবারের স্বল্প সময়ের ১ ব্যতিক্রম ব্যতীত সহস্রাধিক বছর চট্টগ্রাম ছিল আরকান রাজ্যভুক্ত। ২ রাজকীয় ঘরানায় রাজা ও রাজ্যের নানামাত্রিক উত্থান পতনের বিচিত্র ধারায় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ব্রহ্মরাজের আক্রমণে পরাজিত হয়ে আরকান রাজ নরমিখলা রাজ্য ছেড়ে আশ্রয় নেন বাংলার রাজধানী গৌড়ের রাজদরবারে। সেখানে দীর্ঘ দুই যুগের নির্বাসিত জীবনে রাজকার্যে নানারূপ তাৎপর্যময় সহযোগিতা দানের ৩ মধ্য দিয়ে গৌড় রাজ তথা বাংলার সুলতানের চিত্ত জয় করে তাঁরই নিরঙ্কুশ সহযোগিতায় ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় আরকান রাজ সিংহাসনে আরোহন করেন নরমিখলা। নরমিখলা আরকান রাজসিংহাসনে আরোহন করে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বর্মি আক্রমণ থেকে আরকান রাজ্য রক্ষার অভিপ্রায়ে নতুন রাজধানী নির্মাণ করেন মাউকাও নগরীতে-যা ভৌগলিক দিক থেকে চট্টগ্রামে সন্নিকটবর্তী। ৪ বস্তুত নরমিখলার চট্টগ্রামের সন্নিকটবর্তী মাউকাও নগরীতে এই নতুন রাজধানী স্থাপনের সময় থেকেই শুরু হয় আরকান রাজ্যে চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক লোকের যাতায়াত ও অধিবাস। ক্রমে তারা স্বীয় মেধা, প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতায় আরকান রাজের চিত্ত জয় করে অধিষ্ঠিত হন রাজ্যের উচ্চতর পদে-মর্যাদাপূর্ণ নানা অবস্থানে। অতঃপর তাঁদেরই পৌরহিত্যে আরকান রাজ্যে সমাদৃত হয় চট্টগ্রামের বাঙালি কবি ও তাঁদের কাব্যচর্চা।
আরকান রাজ্যে চট্টগ্রামের যে সব কবি কাব্যচর্চা করে খ্যাতিলাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য হলেন, দৌলত কাজী (১৬০০-১৬৩৮), মরদন (১৬০০-১৬৪৫), কোরেশী মাগনঠাকুর (১৬০০-১৬৬০), আলাওল (১৬০৭-১৬৮০)। কবি দৌলত কাজী ও মরদনের পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামের রাউজান থানার সুলতানপুর গ্রামে, আলাওলের হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে আর মাগন ঠাকুরের হয় রাউজানের নোয়াজিশপুর গ্রামে নয়তো পটিয়ার চক্রশালায়। তবে বিতর্ক এড়ানোর জন্যে কেউ কেউ মনে করেন তিনি আরকানের অধিবাসী। হ্যাঁ, শেষ অবধি তো তিনি আরকানে অধিবাসীই হন কিন্তু কোনভাবেই আরকানিজ নন।
সপ্তদশ শতকে আরকান রাজ্যে প্রথম খ্যাতিমান বাঙালি কবি দৌলতকাজী। তিনি আরকান রাজ শ্রী সুধর্মের লস্কর উজির অর্থাৎ সমর সচিব আশরাফ খানের ৫ পৃষ্ঠপোষকতায় রচনা করেন ‘সতী-ময়না ও লোর-চন্দ্রানী’ শ্রী সুধর্মের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মরদন রচনা করেন ‘নসীরা নামা; কোরেশী মাগন ঠাকুর তো নিজেই ছিলেন আরকান রাজের প্রধান অমাত্য অর্থাৎ প্রধান মন্ত্রী-তাঁর কাব্যের নাম ‘চন্দ্রবতী’, আলাওল রচনা করেন আরকান রাজের এই প্রধান অমাত্য কোরেশী মাগন ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘পদ্মাবতী’ ও ‘সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামান,’ মাগন ঠাকুরের প্রয়াণের পর আলাওল তাঁর পরবর্তী কাব্যসমূহের রচনায় লাভ করেন একাধিক রাজ অমাত্যের পৃষ্ঠপোষকতা।৬
উল্লেখ্য যে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের/কাব্যের প্রচল প্রথানুগ ধারায় আরকান রাজ্যে রচিত এই কাব্যধারা বিষয়ের নবত্বে ও শৈল্পিক বিশেষত্বে সুস্পষ্ট স্বাতন্ত্র্যতায় সুচিহ্নিত। যেখানে মধ্যযুগের অপরাপর কাব্যধারার মূল বিষয় ছিল ধর্ম ও দেবতা সেখানে আরকান রাজ্যে অবস্থানকারী বাঙালি কবিকুলের রচিত কাব্যধারায় দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠে মর্তলোকের মানবমানবী ও তাদের প্রণীত প্রণয়সহ জাগতিক নানা অনুষঙ্গ এবং সেই সঙ্গে কাব্যকলায় ঝংকৃত হয়ে ওঠে নানা মাত্রিক অভিনতুন শিল্পিত অভিব্যঞ্জনা। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই কাব্যধারাকে অভিহিত করা হয়েছে রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান অভিধায়-যদিও সঙ্গত ছিল রোমান্স প্রণয়োপাখ্যান অভিধায় অভিহিত হওয়া। তবে এ ধারা স্রষ্টা তাঁরা নন-এধারার আদি কবি চট্টগ্রামেরই পঞ্চদশ শতাব্দীর শাহ মুহাম্মদ সগীর রচনা করেন ‘ইউসুফ-জোলেখা’। অতঃপর এ ধারায় ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে যুক্ত হন দৌলত উজির বাহরাম খান, সা’বারিদ খান, মুহাম্মদ কবীর রচনা করেন যথাক্রমে ‘লায়লী মজনু’, ‘বিদ্যাসুন্দর’ ও মধুমালতী। বস্তুত সপ্তদশ শতাব্দীতে আরকানে রচিত বাংলা কাব্যসাহিত্য প্রতিবেশগত আনুকূল্যে স্বাধীন শিল্প স্বকীয়তায় এই ধারাকেই উন্নীত করে দেয় অনন্য উচ্চতায়।
আরকান রাজ্যে, চট্টগ্রামের কবিদের মধ্যে সর্বাগ্রে উচ্চারিত নাম দৌলত কাজী। তাঁর কাব্যের নাম সতী ময়না লোর চন্দ্রানী।’ ভারতীয় বৈচিত্র্যময় লোক ঐতিহ্যের আহীর লোক গাথার লোর-চান্দার লৌকিক কাহিনীকে প্রথম কাব্যরূপ দেন হিন্দিভাষী কবি মওলানা দাউদ রচনা করেন। ‘চন্দায়ন’ চতুর্দশ শতাব্দীতে; পঞ্চদশ শতাব্দীতে কাব্যটিকে নতুন রূপে ও নামে উপস্থাপন করেন আরেক হিন্দিভাষী কবি সাধন রচনা করেন ‘মৈনা সৎ’। অতঃপর সপ্তদশ শতাব্দীতে আরকানে বসে বাঙালি কবি দৌলত কাজী রচনা করেন ‘সতী-ময়না লোর চন্দ্রানী।’ তবে কি দৌলত কাজীর ‘সতী-ময়না লোর চন্দ্রানী। পূর্বোক্ত দুই কাব্যের সমন্বিত অনুকরণ? অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন সাধনের ‘মৈনা সৎ’ কাব্যের কথা। দৌলত কাজীর কাব্যেও সাধনের প্রাসঙ্গিক উল্লেখ আছে। কিন্তু চতুর্দশ শতাব্দীর মওলানা দাউদের ‘চন্দায়ন’ ও পঞ্চদশ শতাব্দীর সাধনের ‘মৈনা সৎ’-এই দুই হিন্দি কাব্যের সম্মিলিত কাহিনীর মধ্যেও ‘সতী ময়না লোর চন্দ্রানী’র কাহিনী উৎসের সামগ্রিক রূপটি খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে মমতাজুর রহমান তরফদার তাঁর বিখ্যাত ‘বাংলা রোমান্টিক কাব্যের আওয়াধী হিন্দি পটভূমি’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন,৮ এই দুই হিন্দি কবির কাব্য ছাড়া লোক প্রচলিত আরও নানামাত্রিক উৎস থেকে দৌলত কাজী তাঁর কাব্যের কাহিনী ও উপকরণ সংগ্রহ করেন। ফলে দাউদ ও সাধনের কাব্যকাহিনী-অতিরেক নবতর কাহিনীর সংযোজন যেমন এতে ঘটেছে তেমনি এই দুই কাব্যকাহিনীর নানা অংশ বর্জিতও হয়েছে। কাজেই দৌলত কাজীর সতী ময়না লোর চন্দ্রানী কাব্যকে আর কোন অর্থেই অনূদিত কাব্য বলার সুযোগ থাকে না, কার্যতই তা হয়ে ওঠে মৌলিক সৃষ্টি।
‘সতী ময়না লোর চন্দ্রানী’ কাব্যের উপজীব্য বিষয় মানবপ্রেম। প্রেমের দু’টো রূপ-লোর ময়না বিশুদ্ধ দাম্পত্য প্রেম ও লোর চন্দ্রানীর পরকীয়া প্রেম। এক পুরুষ চিত্তকে কেন্দ্র করে দুই নারী-হৃদয়ের আর্তির অনন্য স্পন্দন। লোর-চন্দ্রানীর প্রেম সম্পর্ক অন্তর্গত কামনা ও পরিণতি সামাজিক দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য হলেও অমানবিক নয়। বস্তুত চন্দ্রানী কুলকলঙ্কিনী হলেও প্রেম বিজয়িনী। পক্ষান্তরে ময়না একনিষ্ঠ দাম্পত্য প্রেমে বিশ্বাসী ও বিজয়ী।
কাহিনীর তিন প্রধান চরিত্রের মধ্যে চন্দ্রানীই সর্বাধিক উজ্জ্বল। লোর চরিত্রটি তেমন উৎকৃষ্ট নয়। লোকের মধ্য ডুইং আছে সাফারিং নেই। অন্যদিকে ময়না সজীব চরিত্র কিন্তু সক্রিয় নয়। তার মধ্যে সাফারিং আছে ডুইং নেই। চন্দ্রানী সক্রিয়তায় সমুজ্জ্বল। তার মধ্যে ডুইং ও সাফারিং দুই-ই আছে।
কাব্যকাহিনীতে আছে ঘটনার যৌক্তিক পারম্পর্য ও তীব্র গতিময়তা। দৌলত কাজীর বাণী সাধনায় একদিকে যেমন আছে মহাকাব্যের ধ্বনি গাম্ভীর্য ও প্রসাদগুণ, অন্যদিকে গীতিকাব্যের সুর লালিত্য, দূরস্পর্শী অভিব্যঞ্জনার অবভাস।
মরদন দৌলত কাজীর সমসাময়িক কবি। শ্রী সুধর্ম রাজের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি রচনা করেন ‘নসীরানামা’ এটি একটি কাহিনী কাব্য। কাহিনীটি মৌলিক। ‘অদৃষ্ট লিপি অখন্ডনীয়’-এটিই তাঁর ‘নসীরানামা’ কাব্যের প্রতিপাদ্য বিষয়।
আবদুল করিম ও আবদুল নবী নামের দুই বণিক বন্ধু পরস্পরকে বেয়াই করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে আবদুল করিমের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটলে বন্ধু আবদুল নবী প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে। অর্থাৎ তাঁর ছেলে সবীরের সাথে বন্ধু আবদুল করিমের কন্যা নসীরার পূর্ব প্রতিশ্রুত বিয়েতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। কিন্তু পরে যখন সেও দুরবস্থায় পতিত হয়, তখনই পূর্ব প্রতিশ্রুত প্রতিজ্ঞা পালনে একনিষ্ঠ হয়ে ওঠে; সম্পন্ন হয় সবীর নসীরার শুভ বিবাহ।
এভাবেই কবি মরদন কল্পলোকের মায়াজালে নয় প্রত্যক্ষ সমাজ বাস্তবতার অন্তর উৎসারি আখ্যানের মধ্য দিয়ে প্রতিপন্ন করে তোলেন অদৃষ্টের অমোঘতা।
কমি কোরেশী মাগন ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতার কোন প্রয়োজন হয়নি। কেননা তিনি তো নিজেই ছিলেন আরকান রাজ্যের প্রধান অমাত্য বা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাব্যের নাম ‘চন্দ্রাবতী।’
‘চন্দ্রাবতী’ কাব্যের দুই প্রধান চরিত্র-ভদ্রাবতী নগরের রাজা চন্দ্রসেনের বীরপুত্র বীরভান, আর সরদ্বীপের রাজা শূরপালের সুন্দরী কন্যা চন্দ্রাবতী। চিত্রপট দর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁরা মুগ্ধ হয় পরস্পরের প্রতি। অতঃপর নায়িকা লাভের উদ্দেশ্যে নায়কের অভিযাত্রা । নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে অবশেষে কার্যসিদ্ধ। এই হলো চন্দ্রাবতী কাব্যের কাহিনী।
‘চন্দ্রাবতী’ কাহিনী কাব্য। কিন্তু কাব্য কাহিনীর উৎস জানা যায়নি। ধারণা করা হয় যে এটি কবির মৌলিক রচনা কাজেই কাহিনীও স্বাভাবিক। তবে মরদানের ‘নসীরানামা’-র মতো প্রত্যক্ষ সমাজ বাস্তবতাজাত নয়, দূর কল্পলোকের মায়াজাল আচ্ছাদিত রূপকথাশ্রয়ী। কাব্য কাহিনীর মধ্যে ঘটনা বৈচিত্র্য আছে, কিন্তু অভিনবত্ব নেই। কাহিনীর গতি একমুখিন কিন্তু স্বচ্ছন্দ নয়। বস্তুত কোরেশী মাগন ঠাকুর অসাধারণ জ্ঞানবান পন্ডিত হলেও প্রতিভাবন শিল্পী ছিলেন না। ফলে তিনি যে শিল্প প্রতিমা গড়তে চেয়েছেন তাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটেনি।
আলাওল কেবল আরকান বাজে নয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সমগ্র সপ্তদশ শতাব্দীই শ্রেষ্ঠ কবি। এই মহান কবির আবিষ্কার ও সারস্বত সমাজে যথাযথভাবে উপস্থাপনের সমুদয় কৃতিত্ব বাঙালির মানস-সংকটের মহান মুক্তিদাতা আবদুল করিম সাহিত্যেবিশারদের।৯
আলাওলের পদ্মাবতীর উৎস মহত্তম হিন্দি কবি মালিক মুহাম্মদ জায়সীর পদুমাবৎ। কিন্তু নিছক অনুবাদক কিংবা অক্ষম অনুকারক নন তিনি। তাঁর অসাধারণ প্রতিভাস্পর্শে কাহিনী আবশ্যকীয় বর্জন, সংক্ষেপন ও সংযোজনের ১০ মধ্য দিয়ে পদ্মাবতী হয়ে ওঠে নবতরসৃষ্টি। এই নবত্ব ভাব-ব্যঞ্জনায়ও। জায়সীর পদুমাবৎ মূলত আধ্যাত্মিক ভাবধারা পুষ্ট আলাওলের পদ্মাবতী মানবিক আবদেনস্পৃষ্ট-কালের আবেষ্টন, সামাজিক নিষ্ঠা, গৃহগত সৌজন্য, স্নেহের বন্ধন, নরনারীর একান্ত হৃদয়গত কামনা বাসনার আতীব্র অভিপ্রকাশ ইত্যকার মানবীয় অনুষঙ্গ জায়সীতে নেই, আলাওলেই লভ্য। বলা যায় জায়সীর অতীন্দ্রিয় রূপক আচ্ছাদন ছিন্ন করে আলাওল রচনা করেছেন ইন্দ্রিয়ঘন মানববেদ অর্থাৎ মানবিক রসকাব্য।
সঙ্গত কারণেই পদ্মাবতীর পাত্র-পাত্রীর নামে মাত্র রাজা-রানী তাদের মধ্যে প্রতিফলিত হয় বাংলাদেশের লোকায়ত মানব-মানবীয় আন্তর প্রতিমা। ফলে জীবনবোধের স্বাতন্ত্র্যে আলাওলের পদ্মাবতী হয়ে ওঠে নবজাত।
উপরন্তু তার স্বকীয় শিল্প সিদ্ধি তো সুবিদিত। শব্দের অসাধারণ তাৎপর্যে ব্যবহার ক্লাসিক গুরুত্বে কবিতার পংক্তি ও নিহিতার্থের বিন্যাস এবং আবেগের বিচিত্রমাত্রাকে সুশৃঙ্খল আয়তনে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা কবিতার বিকাশ সম্ভাবনাকে যেন প্রসারিত করে দেন বহুদূর। এখানে সবিনয়ে অবতারণা করছি একটি ঘটনা ও ব্যক্তিগত অনুভবের। বিশ শতকের আশির দশকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুুগ বিশেষজ্ঞ সুলতান আহমদ ভুঁইয়া স্যার ক্লাসে আলাওলের ‘পদ্মাবতী রূপ-বর্ণন খন্ড পাঠ ও বিশ্লেষণ করছেন আমরা স্যারের পাঠ ও বিশ্লেষণ শুনছি আর তরুণ বয়সের দুষ্ঠু রথে সওয়ার মানসনেত্রে পদ্মাবতীর রূপ দর্শনের চেষ্টা করছি। এমতাবস্থায় পদ্মাবতীর একে একে কেশ ললাট ভুরু, আঁখি নাসার বর্ণনা পেরিয়ে স্যার যখন উপস্থিত হলে পদ্মাবতীর অধর সমীপে তখন আমরা অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করলাম প্রৌঢ় প্রফেসরের অবয়বে নব তারুণ্যের অরুনোদয় এবং সেই সাথে কন্ঠে নিঃসৃত হলো আলাওল কৃত অপূর্ব ধ্বনি ব্যঞ্জনা”-তাম্বুল রাতুল হৈল অধর পরশে”।
আমাদের বিশ শতকের এক আধুনিক গীতিকবির গানে নায়িকা পান খেয়ে ঠোঁট লাল করেছিলেন বন্ধু ভাগ্যের জন্যে, তারও প্রায় সাড়ে তিন শত বছর আগে মধ্যযুগে সপ্তদশ শতাব্দীতে আলাওলের কাব্যে ‘তাম্বুল রাতুল হৈল’ অর্থাৎ পান রক্তিম রঙ ধারণ করলো পদ্মাবতী অধরস্পর্শে। এ কেমন প্রতিভা! তিন শতাব্দীকাল পেরিয়েও মানব মনের বিচলন ঘটায় অনতিক্রম্য সন্মোহনের অতীন্দ্রিয় জালে দৃশ্যমান রূপের দৃশ্যাতীত সৌন্দর্য অনুভবে। এমন পরিশীলিত, অন্তর উৎসারি কাব্যিক অভিব্যঞ্জনা সমগ্র মধ্যযুগ জুড়ে দু’চারটি পদাবলী ব্যতীত অনন্য দুর্লভ। এ যেন মধ্যযুগের সামগ্রী নয় আধুনিকেরই অভিযাত্রী। বস্তুত মানববোধের মহত্বে, ভাষিক বিশেষত্বে, আলঙ্কারিক ঔজ্জ্বল্যে আলাওলের কাব্য যেন সঞ্চারিত হয়ে ওঠে অনাগত নবযুগের এক দূরস্পর্শী নান্দনিক অভিব্যঞ্জনা।
কাজেই বাঙালির কাব্য অনুভবে কিংবা সাহিত্যের ইতিহাসে সপ্তদশ শতাব্দীতে আরকানে রচিত চট্টগ্রামের কবিদের এসব কাব্যের নান্দনিক তাৎপর্য অপরিসীম। উপরন্তু বিদ্যমান একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও। এ প্রসঙ্গে মমতাজুর রহমান তরফদারের একটি মন্তব্য স্মর্তব্য: “চর্যানীতির যুগ থেকে আরম্ভ করে মধ্যযুগের বাংলা কাব্যের শেষ, সার্থক প্রতিনিধি ভারতচন্দ্রে কালে পর্যন্ত অগনিত কবির কাব্যে, মহাজিয়া, বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত-তান্ত্রিক মতবাদ স্থাপন পেয়েছে। এযুগের সাহিত্য পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক। মুসলমান কবির লেখাতেও এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। ‘নবী বংশ’ ও ‘মোক্তল হোসেন’ রচনার মূলে যেমন ধর্মীয় অনুপ্রেরণা সক্রিয়, গাজী বিজয়’ ও ‘রসুল বিজয়েও’ তেমনি ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ জাতীয় কাব্যের ভাবধারা ও টেকনিক অনুসৃত হয়েছে। সৈয়দ সুলতান, সৈয়দ মর্তুজা ও আলী রাজার যোগ নিবন্ধ গুলিও ধর্মীয় কাব্য; এগুলোর মধ্যে দেশীয় সংস্কৃতির ছাপ সুস্পষ্ট। মানুষের ভূমিকা এসব কাব্যে নিতান্ত গৌণ। মানুষ দেবদেবীর খেলার পুতুল, নয়তো অতিমানব; তাই তার স্বাভাবিক চিত্রায়ন সেখানে বড় কথা নয়। উদাহরণ দেয়া যায়: বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের দাম্পত্য, প্রেমের কারুণ্য হয়ত সহজেই আমাদের মনকে স্পর্শ করে; কিন্তু একটু গোড়ায় খোঁজ নিলে দেখতে পাওয়া যাবে যে এরা হচ্ছে স্বর্গভ্রষ্ট দেবদেবী ভাগবত পুরানের উষা ও অনিরুদ্ধ। কবি কঙ্কন চন্ডীর বহু প্রশংসিত বাস্তবাদ ও চন্ডীর বিস্ময়কার অলৌকিকতার পরিপ্রেক্ষিতে ম্লান। জয়েন-উদ-দীনের ‘রসুল বিজয়’ এ রসুলের ক্রিয়া কলাপ অতি মানবীয়। মধ্যযুগের ধর্মীয় সাহিত্যের এই ধারাটি প্রাগাধুনিক যুগ পর্যন্ত চলে এসেছে। এইধর্মীয় গতানুগতিকতার শৃঙ্খল থেকে যে কজন কবি বাংলা কাব্যকে মুক্তি দিয়েছিলেন, তারা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বাংলার বাইরে থেকে ভারতের হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চল সুদূর ইরান থেকে যেখানে বহু আগেই রোমান্টিক কাব্য রচনার ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। আওয়াধী হিন্দী ও ইরানী কাব্যগুলোর অধিকাংশই সূফী মতবাদের রূপক হলে বাঙালি কবিগণ তাদের মধ্যে থেকে মানবীয় উপকরণ গুলোর উপর জোর দিয়ে এক নতুন সৃষ্টির ভিত্তি মূল গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের এই মানবমুখিতার পিছনে যে কোনো শক্তিই ক্রিয়াশীল হয়ে থাকুক না কেন, তাঁরা যে রোমান্টিক কাব্যের একটি নতুন গতিপথ প্রস্তুত করে দিয়ে গেছেন, এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা চলে না।
বাংলা রোমান্টিক কাব্যের হিন্দী ধারাটি ইরানী ধারার চেয়ে গৌণতর নয়। ফরাসী ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখা’ ও ‘দৌলত উজির রাহরাম খানের ‘লায়লী মজনু, কিন্তু দৌলত কাজী ও আলাওল যে শিল্প জ্ঞান ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন, তা ঐ দুটি কাব্যে মিলবে বলে সন্দেহ।১৯
অবশ্যই দৌলত কাজী ও আলাওলে তথা আরকান রাজ্যে রচিত বাংলা কাব্যের শিল্পগত ও প্রতিভাজাত উচ্চমূল্য তো আছেই উপরন্তু এর বাইরেও আছে দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, যা উল্লেখিত হয়নি মমতাজুর রহমান তরফদার বা অন্য কারো ভাষ্যে। আর হলো ধর্ম নিরপেক্ষকতা ও শিল্প স্বাধীনতা।
উল্লেখ্য যে, সমগ্র মধ্যযুগ ব্যাপী হিন্দু কবিরা বাংলা ভাষায় কাব্যরচনা করেছেন দৈবী প্রেরণায় বা দেবতা কর্তৃক স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আর সুলমান কবিরা ধর্মান্ধ অবাঙ্গালী সমাজ-সংগঠকদের কাছে অনাকাঙ্খিত অপরাধ স্বীকার পূর্বক নানা কৈফিত প্রদানের মধ্য দিয়ে-যার সূচনা শাহ্‌্‌ মুহাম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখায় এবং তা নিম্নরূপ-
‘চতুর্থে কহিমু কিছু পোথার কথন।
পাপ ভয় এড়ি লাজ দৃঢ় করি মন।।
নানা কাব্য কথা রসে মজে নরগণ।
যার যেই শ্রধায় সন্তোষ করে মন
না লেখে কিতাব কথা মনে ভয় পাত্র।
দোষির সকল তাকে ইহ ন জুয়া এ ।।
গুণিয়া দেখিলু আহ্মি ইহ ভয় মিছা।
ন হয় ভাষায় কিছু হয় কথা সাচা ।।
শুনিয়াছি মহাজনে কহিতে কথন।
রতন ভান্ডার মধ্যে বচন সে ধন ।।
বচন রতন মণি যতনে পুরিয়া।
প্রেমরসে ধর্ম বাণী কহিমু ভরিয়া।।
ভাবক ভাবিনী হৈল ইছুফ জলিখা।
ধর্মভাবে করে প্রেম কিতাবেত লেখা।
ন হৈতে প্রেমক ভাব ইছুফ অন্তর।
জলিখা মজিল তাক বিরহ সায়র ।।
কিতাব কোরান মধ্যে দেখিলুঁ বিশেষ।
ইছুফ জলিখা কথা অমিয়া অশেষ।।
কহিব কিতাব চাহি সুধারস পুরি।
শুনহ ভকত জন শ্রুতিঘট ভরি।।
দোষ খেম, গুণ ধর রসিক সুজন ।
মোহাম্মদ ছগীর ভনে প্রেমক বচন ।।”
উত্তরকালে আরো কঠিন কঠোর কৈফিয়ত প্রদান সত্ত্বেও ‘মুনাফিক’ ঘোষিত হয়েছিল ‘নবী বংশ” শব-ই-মেরাজ, ‘রসুল বিজয়’ তফাৎ-ই রসুল’ এর কবি সৈয়দ সুলতান এবং অবশেষে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে একান্ত নিরূপায়তায় তা প্রতিরোধে প্রবল বিক্ষোভে চিৎকার করে উঠেছিলেন কবি আবদুল হাকিম-
“যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ।।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।
এরকম কোন কৈফিয়ত প্রদান কিংবা কোন বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি আরকান রচিত বাংলা কাব্যের কবিদের। এক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণরূপে অবাধ মুক্ত স্বাধীন। উপরন্তু তাঁদের সৃষ্টি সম্ভার ছিল সুদীর্ঘকালীন হিন্দু মুসলমানের দ্বিস্রোতে/ ধারায় প্রবহমান ধর্মভাবাশ্রয়ী সাহিত্য ধারার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ নিখাঁদ মানববোধ আশ্রয়ী।
কাজেই এই পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলা কি অনৃত ভাষণ হবে, বাংলা সাহিত্যে প্রথম ধর্ম নিরপেক্ষ বা ধর্মভাবহীন নিখাঁদ ভাষিক ও শৈল্পিক স্বাধীনতার সৌরভ সঞ্চারিত হয় আরকান রাজ্যে চট্টগ্রামের কবিকুলের হাতেই।
পাদটীকা ও তথ্যপঞ্জী:
১. তন্মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ষষ্ঠ শতকে সমতটের খড়গ রাজবংশ, সপ্তম শতকে বৌদ্ধদের রাজবংশ, অষ্টশতকের দ্বিতীয়ার্ধে পাল রাজবংশের রাজা ধর্মপাল দশম শতকের প্রথমার্ধে চন্দ্রবংশের এবং ১৩৪০ থেকে ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীন সুলতান ও আফগান শাসনকাল।
২. আবদুল হক চৌধুরী, ‘চট্টগ্রামের নামের উৎস’ ও চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ মুহাম্মদ মজিরউদ্দিন মিয়া ও তসিকুল ইসলাম সম্পাদিত আবদুল হক চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ ১৯৯৬ বাংলা একাডেমী ঢাকা পৃ. ২১২ ও ২৯৭-২৯৮।
৩. দ্রষ্টব্য আবদুল হক চৌধুরী প্রবন্ধ বিচিত্রা: ইতিহাস ও সাহিত্য, প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৯৫, বাংলা একাডেমী ঢাকা, পৃ ১০২।
৪. দ্রষ্টব্য, পূর্বোক্ত পৃ. ১০৩।
৫. তাঁর নিবাস সম্পর্কে ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক বলেন-“আশরাফ খান চট্টগ্রামের অধিবাসী ছিলেন। বর্তমান হাটহাজারী থানার ‘চারিয়া’ গ্রামে তাঁহার বিরাট পাকা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং একটি দীঘিকা আজও তাঁহার স্মৃতি বহন করিতেছে। রাউজান থানার অন্তর্গত ‘কদলপুর’ গ্রামে ‘লস্কর উজিরের দীঘি’ ও এই আশরাফ খানের অন্যতম কীর্তি। (ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য, দ্বিতীয় প্রকাশ ১৯৯৮, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ১৫২।
৬. দ্রষ্টব্য ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক, পূর্বোক্ত পৃ. ১৫৮।
৭. দ্রষ্টব্য, অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, পুনমুদ্রণ একাদশ সংস্করণ-১৯৯১ মডার্ন বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড কলিকাতা পৃ. ১৯৯।
৮. দ্রষ্টব্য মমতাজুর রহমান তরফদার, বাংলা রোমান্টিক কাব্যের আওয়াধী-হিন্দী পটভূমি প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ১৯৭১ বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭১, পৃ. ৮৩।
৯. এ প্রসঙ্গে বৃহত্তর পাঠক সমাজের জ্ঞাতার্থে ডক্টর ওয়াকিল আহমদের একটি তথ্যপূর্ণ ভাষ্য উদ্ধৃত করছি-
“আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ পদ্মাবতীর ছত্রিশখানা পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। আলাওলকে সাহিত্য সমালোচনার জগতে সম্ভাবত তিনিই প্রথম টেনে এনেছিলেন। তিনি পূর্ণিমা পত্রিকায় ১৩০৬ বঙ্গাব্দে ‘কবিবর সৈয়দ আলাওল সাহেব’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশ করেন। তখন থেকে শুরু করে ১৩৫৯ সন পর্যন্ত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলাওলের জীবনী ও রচনাবলিকে কেন্দ্র করে তিনি পঞ্চাশোর্ধ প্রবন্ধ ও দুখানি পুস্তকে তাঁর চিন্তার ফসল প্রকাশ করেন এমন বহু ব্যক্তি বিবিধ পত্র-পত্রিকা পুস্তকে আলাওলের উপর আলোকপাত করেন। আলাওল বড় কবি, এমন গুণগ্রাহী লেখক সমালোচকের নিরন্তর প্রয়াসের মধ্য দিয়ে তাই ব্যঞ্জিত। সব লেখা মূল্যবান নয়, তবে কিছু প্রবন্ধ ও পুস্তক উচ্চমানের হয়েছে। এদের মধ্যে ড. মুহাডম্মদ শহীদুল্লাহ, ড: মুহাম্মদ এনামুলহক, ড: সুকুমার সেন, ড: আহমদ শরীফ, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।”
[ দ্র. ওয়াকিল আহমদ, বাংলা রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, দ্বিতীয় প্রকাশ জুলাই ১৯৮৭, খান ব্রাদার্স এ্যান্ড কোম্পানী, ঢাকা পৃ. ২৯১।] আমরা এই উল্লেখযোগ্য লেখক তালিকায় যুক্ত করছি আরো দুটি নাম মমতাজুর রহমান তরফদার ও ওয়াকিল আহমদ।
১০. দ্রষ্টব্য ক. মমতাজুর রহমান তরফদার, পূর্বোক্ত পৃ. ১৮৭
খ. ওয়াকিল আহমদ, পূর্বোক্ত পৃ. ২৯৯-৩০৮।
১১. মমতাজুর রহমান তরফদার পূর্বোক্ত পৃ. ৪-৫।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক; অধ্যাপক, সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে একাত্তরের দুটি বিক্ষুব্ধ নাট্যসন্ধ্যা
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ যুবক আটক