আমার স্বপ্ন, আমার শহর

দুই তরুণের ভাবনা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম, প্রিয় চট্টগ্রাম। প্রাণের এই শহরকে ঘিরে কত স্বপ্ন নিত্য খেলা করে মনের গহীনে। প্রিয় এই শহরটাকে নিয়ে নতুন প্রজন্ম কী ভাবছে, কীভাবে এ শহরকে আরো বেশি প্রাণ-প্রকৃতি, গতি ও প্রগতির মিশেলে সমৃদ্ধ করা যায় সে সম্পর্কে আজাদীকে জানিয়েছেন এ প্রজন্মের দুই তরুণ-তরুণী; যারা এ শহরকে ভালোবাসেন, এ শহরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
তৈয়বা জহির আরশী : তৈয়বা জহির আরশী আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন। ভালোবাসার শহরটি সম্পর্কে তিনি আজাদীকে বলেন, শৈশবে যখন বাড়ির ছাদ থেকে চট্টগ্রামকে দেখতাম, সে কী নৈসর্গিক দৃশ্য! সবুজ আচ্ছাদিত পাহাড় প্রিয় শহরকে ঘিরে রয়েছে। শিশু মন ভাবত, পাহাড় ডিঙিয়ে এই শহর থেকে মানুষ বের হয় কী করে! আমরা যে এলাকায় থাকতাম, সামনেই ছিল ছোট্ট একটি পাহাড়; তার সাথে ছিল আমাদের নিবিড় মিতালি। শরতে কাশের শাড়ি পরিহিত কোনো বৃদ্ধা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকত আয়, আয়। আমাদের এলাকার আশেপাশে ছিল একাধিক পুকুর, রাস্তার দু ধারে সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। ফড়িং, প্রজাপতি যেন আমাদের নিত্য খেলার সাথী। এসব এখন রূপকথার গল্প।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমন শহর পাওয়া যাবে না, যে শহরটিকে একাধারে ঘিরে রয়েছে সাগর, পাহাড়, নদী ও সবুজ বনায়ন। দুই হাজার বছরেরও বেশি বয়সী চট্টগ্রামের অপরূপ প্রকৃতি আজ ক্ষতবিক্ষত। স্বার্থবাদীদের ভয়াল থাবায় প্রাচ্যের রানি আজ রূগ্নপ্রায়। শিশুদের জন্য নেই খেলার মাঠ, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য নেই সবুজ বৃক্ষরাজি, পাহাড়-নদী মৃতপ্রায়। আছে শুধু জলাবদ্ধতা, আছে যানজট।
আরশী বলেন, আমাদের খুব বেশি চাওয়ার নেই। আমরা চেয়েছি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত, যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন নিরাপদ আধুনিক নগরী। উন্নয়নের নামে প্রহসন আমরা কখনো চাইনি। আধুনিক সুযোগ সুবিধার নামে প্রকৃতিতে ধ্বংসযজ্ঞ চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্ন নয়। পশ্চিমারা যদি পরিবেশ নষ্ট না করে আধুনিক শহর গড়ে তুলতে পারে, তবে আমাদের জন্য অসম্ভব হওয়ার কথা নয়। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছি। প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষত রেখে আধুনিক শহরও গড়ে তুলতে পারি। তবে তার জন্য শুধুমাত্র মাস্টার প্ল্যানে সম্ভব নয়, প্রয়োজন দুর্নীতি মুক্ত সৎ, দেশপ্রেমিক লোকবল।
ঋত্বিক শংকর সেন : ঋত্বিক শংকর সেন পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি জানান, একটি আধুনিক শহর মাত্রই পরিকল্পিত আবাসন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্র, অফিসপাড়া কিংবা স্কুল-কলেজ-হাসপাতালের পর্যাপ্ততা, চমৎকার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু সমুদ্র, নদী বা পাহাড় উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের কমতি না থাকলেও আমরা অপরিকল্পিতভাবে শহরটিকে গড়ে তুলছি। যত্রতত্র স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল গড়ে তোলার হিড়িক, যানজট, নালা-ফুটপাত দখল, জলাবদ্ধতা সমস্যা, কিছু এলাকায় পরিষ্কার পানির অভাব-এ ধরনের কঠিন সমস্যাগুলো অবলোকন না করে বছরের পর বছর আমরা তা দীর্ঘায়িত ও জটিল করে তুলেছি। তাছাড়া এসবের বিরূপ প্রভাব চট্টগ্রামের পরিবেশের ওপর সরাসরি পড়ছে। অবলীলায় হীনস্বার্থ হাসিলে পাহাড় কাটা, মাঠ দখল, খাল ভরাট, নদীকে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে আমরা শহরের উন্নতির পথে অন্তরায় তৈরি করছি। পরিবেশকে অযাচিতভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি।
তিনি বলেন, আধুনিক শহরের সকল পর্যায়ের সুবিধা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধানতম শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানীর কাম্য। কিন্তু তা অবশ্যই পরিবেশের সৌন্দর্য সংরক্ষণ করে। আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম শহরে বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চাই। ব্যস্ততম সড়ক বা এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স জরুরি। দখলমুক্ত ও প্রতিবন্ধী সহায়ক ফুটপাত গড়ে তোলা হোক। শক্তিশালী ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রয়োগের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং, সাইকেল যাতায়াতের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিং লেন, উন্নত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। শহরের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক চালু করা হোক। ক্রীড়াকে গুরুত্ব দিয়ে শহর জুড়ে কমপক্ষে ৫০টি আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ, ওয়ার্ডভিত্তিক নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালু ও সক্রিয়তা বৃদ্ধি করা, পশু জবাই কেন্দ্র, অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট, মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণ করে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঋত্বিক বলেন, সব শেষে পাহার কাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খাল ও নদী দখলমুক্ত ও সংস্কার করে শহরের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত দেখতে চাই। তবেই আমরা একটি স্মার্ট শহর পাব। মনে রাখা জরুরি, প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। প্রকৃতি প্রদত্ত সৌন্দর্য অটুট রেখে আধুনিকতার মিশেলে আমার স্বপ্নের চট্টগ্রাম শহরকে দেখতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির গণআন্দোলনের ডাক হাস্যকর : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসংসদীয় আসন সীমানা নির্ধারণে নতুন আইন পাস