আমাদের সমাজ ও পার্থিব উন্নতির পথ

ইশতিয়াক জাহাঙ্গীর | বুধবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

শুক্রবার। বন্ধের দিন হিসেবে এ দিনে সবারই কাজকর্ম কম থাকার কথা। তো, শুক্রবার দিনে আমার মত একজন অতি সাধারণ মানুষের কাজের তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকার যে কয়টি কাজ সমাজ সম্পৃক্ত তার একটি নমুনা দিচ্ছি। একটা ফুলঝাড়ু কিনলাম। সেটার বাঁধন আর একটু শক্ত করার জন্য খুলতে গিয়ে দেখলাম ভিতরে অর্ধেকটাই পাটখড়ি। তারমানে ৫০ শতাংশই ফাঁকি। বিকেলে একটু শহরের দিকে যাব বলে রাস্তায় বেরোলাম। বন্ধের দিনেও প্রচুর ভিড়। পাবলিক বাসে ওঠার কোনো উপায় নেই। একজন বাইক রাইডারকে ভাড়া করতে চাইলাম। সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত ১৭০ টাকা চাইল। অন্যজন ২০০ টাকা চাইল। আমি বললাম, অ্যাপসে যত আসে তত দেবো। না, ওনারা অ্যাপস নির্ধারিত ভাড়ায় যাবেন না। অথচ সরকারি নির্দেশনা আছে, অ্যাপসে নিবন্ধন না হলে কেউ বাইকে যাত্রী নিয়ে বাইক চালাতে পারবে না। তা গেল। অনেক চেষ্টার পর বাসে চড়লাম। চার্ট লিস্ট এর ভাড়া নিল না। ১৮ টাকার ভাড়া নিল ১২ টাকা। জিজ্ঞেস করলাম, চার্টে উল্লেখিত ভাড়া কেন নিচ্ছে না? মহামতি জানালেন, উনারা কম নেন। আসলে শুভঙ্করের ফাঁকি। চার্ট অনুযায়ী ভাড়া নিতে হলে তো ব্লকে লিখিত সংখ্যার বেশি যাত্রী দাঁড় করিয়ে নেয়ার অধিকার নাই। সে অন্যায় করছে বলে যাত্রীসাধারণকে করুণা করার এমন নাটক সাজিয়েছে। যেটা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য না। একটা বন্ধের দিনের এই হচ্ছে চালচিত্র। অর্থাৎ এদেশে আপনি যেখানে যা কিছুর সংস্পর্শে যাবেন, সবাই আপনাকে ঠকানোর চেষ্টায় রত। এটাই হচ্ছে সামগ্রিক চিত্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এমনটি কেন হবে? আপনি হয়তো বলতে পারেন, আর্থসামাজিক ব্যবস্থার কথা বলতে গিয়ে ধর্মের কথা হচ্ছে কেন? ধর্মের কথা হচ্ছে এই হেতু, কারণ এদেশের মানুষের কাছে তো ধর্ম একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এবং এই অনুভূতির কথাও সব সময় সরবেই বলা হচ্ছে। আর বাঙালি মুসলমান মানসে ধর্মের ভূমিকা কি অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে। এখন উপরের ঘটনাগুলোকে একটু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা যাক। আমরা নিয়ত এ পাঠ করছি, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার। হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে পৃথিবীতে কল্যাণ এবং পরকালে কল্যাণ দান করো। এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় ইসলাম শুধু মানুষকে বেহেশতের পথ দেখায়নি, ইসলাম মানুষকে সর্ববিধ পার্থিব উন্নতির পথও দেখিয়েছে। অথচ বেশীরভাগ মুসলমানই মনে করে থাকে যে, আমরা যেসব এবাদত বন্দেগী করে থাকি সেসব এবাদত এর প্রতিদান শুধু মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য। পার্থিব জীবন বা এই দুনিয়ার জীবনে তেমন কোন সুবিধা তা দিয়ে পাওয়া যায়না। কিন্তু এমন ধারণা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ আল্লাহপাক নিজে ঘোষণা করছেন “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য। “এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের কৃতকার্যতা বুঝিয়েছেন। অথচ কোরআনের এই মর্মবাণীকে অন্তরে ধারণ না করে বাঙালি মুসলমান দুনিয়াকে নরক বানিয়ে ফেলেছে আর আশা করে বসে আছে মৃত্যুপরবর্তী বেহেশতের জন্য। এসব নিয়ে আরও জোরালোভাবে যদি এখনই আমরা না ভাবি, তবে আমাদের সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার শঠতা কোনদিনই দূর হবে বলে মনে হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধফাগুয়া