আমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত

লালদীঘি মাঠে হাসনাত আবদুল্লাহ চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজদের বলতে চাই সতর্ক হয়ে যান প্রভু চলে গিয়েছে কিন্তু দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্রজনতার পাওয়ার কিছুই নেই, আমরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমাদের ছাত্র জনতা রাস্তায় এসে দাঁড়ায়, পুলিশের সামনে বুক পেতে দেয়। চাঁদাবাজটেন্ডারবাজদের বলতে চাই; আমরা বুলেটবোমা ভয় পাই না। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে আপনারা যদি ভেবে থাকেন আবার দুর্নীতি শুরু করবেন তবে ছাত্রনাগরিক আপনাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, প্রভু চলে গিয়েছে কিন্তু প্রভুর দাসরা আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তারা বিভিন্ন রূপে আমাদের মাঝে এসে ইউনিটিকে ভাঙতে চাইবে। আপনাদেরকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।

গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর লালদীঘি ময়দানে ছাত্রনাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগে বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ অডিটোরিয়ামে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন এই সমন্বয়ক। লালদীঘি মাঠে মতবিনিময় সভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক শ্রাবণ, রিয়াজুর রহমজান ও পুষ্পিতা নাথসহ অন্যান্যরা। এছাড়া লালদীঘি মাঠ ছিল বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীতে পরিপূর্ণ। যোগ দিয়েছিলেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষও। এর আগে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুর থেকে লালদীঘি ময়দানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে মতবিনিময় সভা শুরু হয়।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকায় যখন আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তখন চট্টগ্রাম থেকে আপনারা আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আমরা দেখেছি ওয়াসিমরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, শান্তরা কিভাবে রক্ত দিয়েছে। আমরা সেই চট্টগ্রামে এসেছি। আমরা আপনাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, সংকটের সময়ে আমরা যেভাবে একসঙ্গে হয়েছিলাম, এখন দেশটা পুনর্গঠনের সময়ও আমাদেরকে একইভাবে একসঙ্গে থাকতে হবে।

দুর্নীতি করার চেষ্টা করলে দেখে নেওয়া হবে জানিয়ে হাসনাত বলেন, ছাত্র আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করবেন না। ছাত্রদের যে আন্দোলনটি হয়েছিল সেই আন্দোলনটি হয়েছিল ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারবাজ এবং দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছে আপনাদের সতর্ক করতে চাই। আপনারা ১৬ বছর একটি দলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন যদি আর একটা দলের ছত্রছায়ায় এসে দুর্নীতি করার চেষ্টা করেন ছাত্রজনতা দেখে নিবে।

পুলিশ বাহিনীর প্রতি উদ্দেশ্যে করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্র এবং পুলিশ হচ্ছে ভাইভাই। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই। আপনারা কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে যারা খুনিদের দোসর ছিল তাদেরকে আমরা চিনি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আপনারা জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হলে আপনাদের অবস্থাও বেনজীরহারুনের মতো হবে।

চট্টগ্রামে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে বিভাজন করেছে। বিভাজনের রাজনীতি বিদ্যমান রেখে তারা ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। কিন্তু এই ফ্যাসিজম পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা উদাহরণ তৈরি করেছি। আমাদের সবার প্রথম পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। এরপর উপস্থিত ছাত্রজনতাকে হাত তুলে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষার শপথ করান তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে জানিয়ে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা সাত চল্লিশে দেশভাগে একতাবদ্ধ ছিলাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু এখন রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময় বিভাজন তৈরি হয়েছে। আমরা আগে যেমন একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছি, ঠিক তেমনি এখনো আমাদেরকে একতাবদ্ধ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদেরকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট শুধু শেখ হাসিনা ছিল না। ফ্যাসিস্ট ইনস্টিটিউট ছিল, ফ্যাসিস্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ছিল, ফ্যাসিস্ট থিওলজি ছিল, ফ্যাসিস্ট কালচার ছিল, ফ্যাস্টিস্ট ড্রেসআপ ছিল। আমাদের প্রত্যেকটি জায়গায় ফ্যাস্টিস্ট বিরাজমান ছিল। আপনাদের আশপাশে বাজার কমিটির সভাপতি, মসজিদ কমিটির এবং নাপিত কমিটির সভাপতি ইত্যাদি সংগঠন তৈরি করে সিন্ডিকেট বানিয়ে শেখ হাসিনা ফ্যাসিজমের বীজ বপন করেছে।

এসময় মতবিনিময় সভায় চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে ইতিপূর্বে যেসব গোপন চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিল করতে হবে। দেশের সকল মানুষকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে কোনো দেশের রক্তচক্ষু দেখে আমরা ভয় না পাই। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, হাটহাজারী মাদরাসার সমন্বয়ক মোহাম্মদ জুনায়েদ। এতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারা সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধশিপ ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় একজনের মৃত্যু