আবীরের বাসায় পাওয়া রক্তের সাথে আয়াতের ডিএনএর মিল

আয়াত হত্যা মামলার তদন্তে অগ্রগতি

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চাঞ্চল্যকর শিশু আয়াত () হত্যা মামলার চার্জশিট অচিরেই আদালতে জমা দিতে চলেছে পিবিআই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আয়াত হত্যা মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে আছে। সম্প্রতি ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পেয়েছি। আরেকটা রিপোর্ট হাতে পেলেই চার্জশিট জমা দিতে পারব। এরপর ফাইনাল রিপোর্ট দিতে সময় লাগবে না।

পিবিআই থেকে জানা গেছে, আয়াতের খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আবীরের বাসার শেডে পাওয়া রক্তের নমুনার সাথে আয়াতের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মনোজ দে জানান, আসামি আবীরের ঘরের মালামাল রাখার শেডে জমে থাকা রক্তের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর আয়াতের ডিএনএ প্রোফাইল করা হয় সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে। সেই সোয়াবের সাথে ডিএনএ প্রোফাইলের মিল পাওয়ার প্রতিবেদন ল্যাব থেকে আমরা হাতে পেয়েছি।

প্রসঙ্গত, নগরীর ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছ মুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে আলিনা ইসলাম আয়াত () ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। ঘরের পাশে মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল সে। এরপর তদন্তে নেমে পিবিআই আয়াতের প্রতিবেশী আবীর আলী (১৯) নামের এক তরুণকে আটক করে। ২৫ নভেম্বর সে পিবিআই কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করে, আয়াতকে খুনের পর লাশ ছয় টুকরো করে সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২১ বছর ধরে আবীরের পরিবার নয়ারহাটে আয়াতদের ভাড়াটিয়া ছিল। তার জন্মও ওই বাড়িতে। তবে বাবামার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তার মা আকমল আলী রোড পকেট বাজার এলাকায় পৃথক বাসায় ভাড়া থাকত তার মা ও বোন। উভয় বাসায় আয়াতের যাতায়াত ছিল। মায়ের বাসায় আয়াতের লাশ নিয়ে সে ছয় টুকরো করে। পরে প্যাকেট করে বাসার শেডে তুলে রেখেছিল, যাতে সুবিধাজনক সময়ে টুকরোগুলো নিরাপদ দূরত্বে ফেলে আসতে পারে।

জিজ্ঞাসাবাদে আবীর জানিয়েছিল, আয়াতদের নিচ তলায় যে বাসাটিতে তার বাবা থাকেন, সেটির চাবি তার কাছে ছিল। ১৪ নভেম্বর বিকেলে আয়াতকে কোলে করে সেই ঘরে নিয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই শ্বাসরোধ করে খুন করে। এরপর লাশটি সে তার বাবার একটি পুরনো লুঙ্গি দিয়ে পেঁচিয়ে ব্যাগে করে আকমল আলী রোড পকেট বাজারে তার মার বাসায় নিয়ে বাথরুমের উপরে মালামাল রাখার শেডে রেখে দেয়। আরেকটি ব্যাগে আগের বাসা থেকে বিছানাপত্র নিয়ে যাওয়ায় তার মা ও বোন বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ করেনি। কারণ ওই সময় আবীর তার মা ও বোনকে আয়াতের খোঁজ নিতে তাদের বাসায় পাঠায়। তার মাবোনও আয়াতের বাসায় গিয়ে তার খোঁজ খবর নিতে শুরু করে।

আবীর পুলিশকে জানায়, মাবোনকে আয়াতের বাসায় পাঠিয়ে সে রাতে একটি কাটার ও কিছু পলিথিন কেনে। কাটার দিয়ে আয়াতকে কেটে টুকরো করার চেষ্টা করে। না পেরে বাসায় থাকা বঁটি দিয়ে আয়াতের মৃতদেহ বাথরুমে নিয়ে ছয় টুকরো করে। সেখানে শরীর থেকে হাত, পা ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে ছয়টি টুকরো পলিথিনে মুড়িয়ে স্কচ টেপ দিয়ে পুনরায় মালামাল রাখার শেডে রেখে দেয়। পরদিন ভোরে ও রাতে কিছু অংশ আকমল আলী রোডের স্লুইচ গেইটের একটি নালায়, আর কিছু অংশ সাগরে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় আয়াতের বাবা ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। যার তদন্ত করছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব আবীরের বাবা, মা ও ছোট বোনকে গ্রেপ্তার করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জেনেও গোপন রাখার অভিযোগে ১৭ বছর বয়সী অপর এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

আবীরকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বঁটি ও আয়াতের জুতা উদ্ধার করে। ৩০ নভেম্বর আউটার রিং রোডের আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের এক গর্ত থেকে আয়াতের দুই পা এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক মাঠে পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি
পরবর্তী নিবন্ধ১৯ বছর আত্মগোপনে থাকার পর ৭ মামলার আসামি গ্রেপ্তার