আপনার জিদকে জেতার নেশায় পরিণত করুন

হেলাল চৌধুরী | শুক্রবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আমরা যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, আমাদের চাওয়া পাওয়াগুলো হয় খুব সীমিত, খুব ছোট। আমরা খুব অল্পতেই খুশী হই। ছোট ছোট উপলক্ষ্য পেলে আমরা সেলিব্রেট করি। ফেসবুকে সেসব ইভেন্টের ছবি আপলোড করে মানসিক তৃপ্তি অনুভব করি। সারা বছর গাধার মতো পরিশ্রম করার পর আপনি আশায় থাকেন যা হবার হয়েছে, এবার অন্তত পদোন্নতিটা হবে। বস্‌ এবার স্ট্রং রিকমেন্ড করেছেন। তাই আপনি আশা করছেন ভালো একটা ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এবার ভালো ইনক্রিমেন্ট হলে একটা ডিপিএস খুলবেন। মোবাইল সেটটা হাত থেকে পড়ে স্ক্রিন ভেঙে গেছে সেই কবে। পারফর্মেন্স রিভিউ লেটারটা হাতে পেলে নতুন একটা মোবাইল সেট কিনবেন। সব প্ল্যান সেট।

একসময় পরম কাঙ্ক্ষিত পারফর্মেন্স রিভিউ লেটারটা হাতে আসে আপনার। না, এবারো পদোন্নতি হয়নি। কোনও কারণ ছাড়াই আপনি অনেকগুলো বছর একই পোষ্টে আটকে আছেন। ইনক্রিমেন্ট যা হয়েছে তা দিয়ে বড়জোর কাজের বুয়ার তিন দিনের বেতন দেয়া যাবে। আশেপাশের কারো কারো পদোন্নতি হয়েছে। ভালো ইনক্রিমেন্টও হয়েছে। আবার আপনার মতো বঞ্চিতও হয়েছে অনেকে। কেউ কেউ উল্লাস করছে। আপনি রাবারের মতো গাল টেনে হেসে তাদের কংগ্রেচুলেট করলেন।
বুকটা কেমন যেন ভারী হয়ে আছে। ওয়াশরুমে গিয়ে আপনার লাল হয়ে যাওয়া চোখে কিচ্ছুক্ষণ পানি দিলেন। তারপর বসের রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ উষ্মা প্রকাশ করলেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন ‘এই চাকরি আর করবো না’। মাথা গরম করে এদিক ওদিক কিছু ফোন করলেন চাকরির খোঁজে। রাগ করে একদিন অফিসেও আসলেন না।

ব্যাস…. এটুকুই। দিন দুয়েক পর আপনি সবকিছু ভুলে গেলেন। মেনে নিলেন। মানিয়ে নিলেন। তারপর আবার সেই গাধার খাটুনি। আবার সেই গৎ বাঁধা দিনলিপি। পরের বছরও আপনার কোন ইমপ্রুভমেন্ট হলো না। আপনি কি বুঝতে পারছেন? আপনি একটা ‘নেভার এন্ডিং চক্রে’ পড়ে গেছেন? আপনি চিরকাল এই চক্রের মধ্যেই থাকবেন। আপনার অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না কখনো। কারণ, শুধু আপনিই আপনার আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

বিশ্বাস করুন, আপনার কোম্পানি অথবা ম্যানেজমেন্ট আপনার এই অবস্থার জন্য চুল পরিমাণও দায়ী নয়। আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া না হলে আপনি এই কোম্পানি ছেড়ে যাবেন না। এই বিষয়টা যখন আপনার ম্যানেজমেন্ট বুঝে যায়, তখন তারা কোন দুঃখে আপনাকে পদোন্নতি দেবে অথবা বেতন বাড়াবে? আপনিই বলুন।

ভাবছেন কী করবেন! তাহলে কিছু কথা বলি। আপনি যদি দাসত্বকে মেনে নেন, তবে আপনি দাস হবারই যোগ্য। আপনি যদি পরাজয়কে মেনে নেন, তবে আপনি পরাজিত হবারই যোগ্য। আপনি যদি অপমান অবহেলা মেনে নেন, তবে আপনি অপমানিত অবহেলিত হবারই যোগ্য। নিজের বর্তমান অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করুন। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নিজের মধ্যে জিদের সঞ্চার করুন। নিজের স্কিল ডেভেলপ করুন। জীবন বদলানোর জাদুর কাঠি আপনার হাতেই আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাহিত্যে একটি জাতির চেহারা ফুটে ওঠে
পরবর্তী নিবন্ধঅপূর্ণতার নীরব শব্দ