আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম জয়ের রূপকথা তৈরি করলো বাংলাদেশের মেয়েরা

| বুধবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। সবকিছু ছাপিয়ে বাংলার মেয়েরা গড়েছে ইতিহাস। হিমালয়ের দেশ থেকে ছিনিয়ে এনেছে শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি। দেখিয়েছে দাপট, করেছে একের পর এক রেকর্ড। আনন্দে ভেসেছে ওরা, ভাসিয়েছে দেশবাসীকে। ১৯ বছর পর এনে দিয়েছে ট্রফি। প্রথমবারের মত নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব এখন বাংলার মেয়েদের, বাংলাদেশের।
নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। এর ফলে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতল মেয়েরা। নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবিচল লক্ষ্য, অদম্য মনোবল, প্রবল ইচ্ছা আর দৃঢ়সংকল্পকে সঙ্গী করে তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের পথ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহের ‘কলসিন্দুর’-এ বেড়ে ওঠা আটজন আছেন এ দলে। এ দলের মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, মার্জিয়া আক্তারের বাড়ি কলসিন্দুরে। ৪ গোল করা সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ি রংপুরে। আঁখির সিরাজগঞ্জ, সাবিনা ও মাসুরা সাতক্ষীরা, কৃষ্ণা টাঙ্গাইল, মণিকা, রুপনা ও ঋতুপর্ণা রাঙামাটির।
আসলে ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ভাষ্যকারদের মতে, প্রতিপক্ষ নেপালের বিপক্ষে এতদিন জয় ছিল অধরা। কিন্তু যে দিনটা বাংলাদেশের, যে দিনটা কৃষ্ণা-শামসুন্নাহারদের, সেদিন তো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়বেই। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। জিতল নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। অর্জন করল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব নারী দলে এবারই প্রথম। উল্লেখ করতে পারি, এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল। এবার কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিনিয়র ফুটবলে কখনো ভারত ও নেপালকে না হারানো বাংলাদেশ এবার তাদের হারিয়েছে। গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে ভারতকে আর ফাইনালে নেপালকে।
বাংলাদেশের মেয়েদের অসামান্য সাফল্যে উৎসব চলছে চারদিকে। আজাদীতে গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন নেপালের রাজধানী কাটমান্ডুর রঙ্গশালা স্টেডিয়ামকে সত্যিই রঙ্গশালা বানিয়ে দিয়েছিল বাংলার মেয়েরা। যে রঙ্গশালায় বাংলাদেশ কেবলই হেসেছে আর স্বাগতিক নেপালীরা চোখের জলে ভেসেছে। বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা নারী দল বৃষ্টি ভেজা ভারি মাঠে যেন নিজেদের জান প্রাণ উজাড় করে দিয়ে খেলেছে। আর তাতেই একেবারে অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করল সাবিনা-কৃঞ্চা-স্বপ্নারা। কথায় আছে ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে’। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের দেখাটা ঠিক বিজয়েই হলো। এবারের সাফ মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ। সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিজেদের গায়ে হারের আঁচড় লাগাতো দূরের কথা, কোনো গোলই হজম করেনি। সে আত্মবিশ্বাস আর মনোবল নিয়ে খেলতে নেমেছিল ফাইনালে। তাতেও বাজিমাত। যদিও ফাইনালে একটি গোল হজম করেছে বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক, তবে অক্ষুণ্ন রেখেছে অজেয় থাকার রেকর্ড।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমৃদ্ধ ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গন সমৃদ্ধ ও সমপ্রসারিত হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ অঙ্গনে অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে আছে। সব ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করছে। এটি সবার জন্য অনেক বড় বিষয়। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও অবদান রাখছে। বেশ কয়েক বছরে ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের নারীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করছেন। এ কথা বলা বাহুল্য যে, সব ক্ষেত্রেই নারীদের আগমন আশাপ্রদ। তাঁরা সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ছে। আসলে গত পাঁচ বছরে মেয়েদের ফল যদি দেখি, তা হলে দেখবো যে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের ফুটবলের মানটাও অনেক ভালো। বাংলাদেশের প্রথম ফিফা নারী রেফারি জয়া চাকমা। অনেক ছেলের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী তিনি। এই ধারাবাহিকতায় নেপালের বিপক্ষেও আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম জয়ের রূপকথার গল্প তৈরি করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই আনন্দে বাঁধ ভাঙা জোয়োরে ভাসে বাংলাদেশ দল। ইতিহাস রচনা করে হিমালয়ের দেশ থেকে ফিরছে এই দল। আমরা সেই দলকে অভিনন্দন জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবেলিজ ও মাল্টা-র জাতীয় দিবস