আনোয়ারায় ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ খুলছে বাংলাদেশের নতুন স্বপ্নদুয়ার

| মঙ্গলবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে ঘিরে বেড়েছে উচ্ছ্বাস। একে কেন্দ্র করে আলোয় আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে কর্ণফুলীর এপার ওপার। পড়েছে নতুন ঝিলিক। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের এই মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল। নদীর তলদেশের সঙ্গে সঙ্গে দুই পারেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে সেখানে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘আনোয়ারায় বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে টানেল সংযোগ সড়কের চাতরী চৌমুহনী থেকে কালা বিবির দীঘি মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা। কর্ণফুলীর তলদেশ থেকে উঠে আসা টানেলের মূল সড়ক, কর্ণফুলীর ওয়াই জংশন থেকে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক, চায়না ইকোনমিক জোনের মূল সড়ক সবকিছুই এসে মিলছে এই একটি পয়েন্টে। এ কারণে মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডোরের সেতুবন্ধন হিসেবে ভাবা হচ্ছে এই এলাকাটিকে। ইতিমধ্যে টানেল সড়কের এই সংযোগস্থল ও আশপাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে শুরু হয়ে গেছে ব্যাপক আর্থিক ও বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ। দিন রাত চলছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। টানেল চালুর কাছাকাছি সময়ে অন্তত ১০০ শিল্প কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিনিয়োগ হবে হাজার কোটি টাকা। শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর জমি কেনার প্রতিযোগিতায় এই এলাকায় মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে জমির দাম বেড়ে গেছে ১০ গুণেরও বেশি। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির কারণে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলার হিড়িকও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতির আকাশচুম্বী অর্জন বিশ্বস্বীকৃত। দেশীয়-আন্তর্জাতিক সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও অন্ধকারের অশুভ শক্তির অপচেষ্টাকে নস্যাৎ করে অদম্য প্রজ্ঞা-মেধা-দেশপ্রেম ও সাহসিকতায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার ব্রতে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।
তিনি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ সম্পর্কে বলেন, ‘আজকে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তারই আরেকটি নতুন ধাপে আমরা প্রবেশ করলাম। সেটা হলো কর্ণফুলি নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এতো বিশাল নদীর নীচ দিয়ে একটি টানেল বাংলাদেশেই নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে বলেন, ‘আজকে আমরা আরেকটি কাজ করে দিচ্ছি। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজেরও শুভ উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম। কাজেই এখানে আর ওই যানজট হবে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম-দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পকারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব এবং প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়নসহ গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ অবশ্যই ত্বরান্বিত হবে। টানেলকে ঘিরে বিকশিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন-পার্বত্য অঞ্চলের সমুদয় পর্যটন শিল্প। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতির আকার এবং জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী ডিসেম্বর নাগাদ উদ্বোধনের টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে। ১০ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। ছয় লেনের সংযোগ সড়কের মধ্যে ৪ লেনের কাজও শেষ পর্যায়ে। এদিকে কর্ণফুলীর তীরে আনোয়ারা প্রান্তের টানেলের মুখ থেকে কালা বিবির দীঘি পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ রোডের কাজও প্রায় শেষ। দক্ষিণ বন্দর এলাকায় চলছে ওজন স্কেল, টোলবক্স স্থাপনের কাজ। শেষ হয়েছে দক্ষিণ বন্দর এলাকায় ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজের কাজও। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চীনের সাংহাইয়ের আদলে আনোয়ারা হয়ে উঠবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’।
টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী হবে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদুয়ার। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ সুবিধা পাবে তা নয়, এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্ক ও পূর্বমুখী বাণিজ্য সমপ্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধ