আনন্দের দিন

আয়ান আহমেদ | বুধবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

(৩২,১০৪)

কুয়াশায় ঢাকা ভোরে বিগবি (আমার বড় ভাই) আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো। আম্মু তাড়া দিচ্ছে, ফজরের নামাজ পড়ার জন্য। আমি নামাজ পড়ে দেখছি, পরিবারের কে কে ঘুম হতে জাগল। প্রথমেই বলা উচিত ছিল এখন নভেম্বর মাস।

বড় মামার সাথে জীবনের প্রথম বনভোজনে যাব। মনে মনে খুবই আনন্দিত। বড়মামা সবাইকে তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি তৈরি হওয়ার জন্য। উফ: সবার আগে ছোট ভাই আহনাফ তৈরি। এই পরিবারে আহনাফ অনেকটা বেশি আদুরে। সুবাবা, নুদার, ওয়ারা, গিনি, নুসাইবা, রুমাইসা ওরা সবাই রেডি। সবাই মামাতো বোন, তবে এক মামার মেয়ে নয়, পাঁচ মামার ছেলে মেয়ে। আঃ কি আনন্দ, সবাই তড়িঘড়ি করে। ৭:৩০ মিনিটে গাড়িতে উঠলাম। সবাই সেন্ট প্লাসিড স্কুলে পৌঁছালাম। বলে রাখা প্রয়োজন আমার বড়মামা ৮৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলো। সেই সুবাদে আমাদের সহযোগী করল বেড়াতে যাওয়ার জন্য। কী সুন্দর ব্যবস্থাপত্র। যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মানিক মামা, আমি, আহনাফ, গিনির ফটোসেশন করল। তারপর বাসের মধ্যে আমাদের পুরো পরিবার উঠলাম। কিছু সময়ের পর বড়মামা সবাইকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করল। খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার। সবাই খাওয়া শেষ করে আনন্দ করছে। গাড়ী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করল। তখন সময় ন’টা। গাড়ি চলছেরাস্তার দুই ধারে ক্ষেতের সমারোহ পাশপাশি হিমেল হাওয়া কী ভালো অনুভূতি। এই সুন্দর পরিবেশে কেউবা গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ছে, কেউবা জেগে আছে, কেউ কেউ গল্প করছে। দৃশ্যটা খুবই সুন্দর পুরোটাই ছবির মতো। আমার বৃষ্টি মামি, মিষ্টি মামি, মামি মনি ওদের ঘুমের দৃশ্যগুলো দেখার মতো। পরে আফসোস করছি কেন ছবি তুলিনি। বড়মামা ব্যস্ত ছিল বন্ধুদের সাথে। বড় মামী চুপচাপ পানির বোতল হাতে নিয়ে বসে আছে বাসের সিটে। যাক, অনেক মজা করতে করতে আমরা আল্লাহর রহমতে গন্তব্যে পৌঁছলাম। গন্তব্যস্থল হলো আরশিনগর ফিউচার পার্ক, মিরসরাই তখন সম্ভবত সকাল ১১ টার মত হবে। যাওয়ার পর পরই আবারও নাস্তা। কী সুন্দর পরিপাটি আয়োজন। যার যত ইচ্ছা খাও আবার সাথে চা কফিও ছিল। আমার বাবাতো কফি পেয়ে বেজায় খুশি। আমাদের খাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। শীতের এই ঠান্ডা হাওয়ায় কফিটা বড্ড ভালো লাগছে। খাওয়ার পর চাঙ্গা হয়ে সবাই আবারও ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শুধু আমরা নই বনভোজনের সবাই সেদিনের জন্য একেকজন ফটোগ্রাফার।

আমাদের বনভোজনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। তাহলে বুঝা যায় কত হৈহুল্লোর হচ্ছে। ছবি না তুলে উপায় নেই এত সুন্দর মনোরম দৃশ্য। যিনি ফিউচার পার্কটি তৈরি করেছেন তিনি খুবই রুচিসম্মত ও আধুনিকমনা। যেমনকৃত্রিম লেকে হাঁসের মতো দেখতে নৌকা, কৃত্রিম জলকন্যা, হরিণ, হাতি, ঘোড়া, অজগর সাপ, ময়ূর, দোয়েল পাখি, পেঙ্গুইন, বাঘ ছাড়াও তরমুজের আকৃতির সোফা, মাছ সদৃশ্য বসার জায়গা। আরও চমৎকার দৃশ্য ছিল গাঁয়ের বধূ কলসি কাঁখে পানি নিয়ে যাচ্ছে। সত্যিই অপূর্ব। বাইরে নাকি আরও অনেক সুন্দর সুন্দর দেখার কিছু ছিল। মেঝমামা ঠাণ্ডার কারণে বেরুতে দিচ্ছে না। মটু পাতলুও ছিল বাচ্চাদের জন্য, কাছাকাছি যেতে পারিনি। তবে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিসেনাদের। শ্রদ্ধাসহ ধন্যবাদ জানাই তাঁকে যিনি এই ফিউচার পার্কটি সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন।

এত এত আনন্দের মাঝেও সাহিল ভাইয়াকে খুব মিস করছি। অসুস্থতার কারণে আসতে পারেনি। ভাইয়া সাথে থাকলে ছবি তুলতো আর মজা করতো। মামিমনি রুমাইসা, আলহান আমাকে নিয়ে ছবি তুলছে। মিষ্টি মামি নুদারসহ আমাদেরকে নিয়ে লেকের নৌকায় চড়ছেসাথে বিগবি (বড় ভাই)ও ছিল। মানিকমামা আহনাফকে নিয়ে বাঘের পিঠে বসে ছবি তুলছে। মেজ মামিতো নিজেকেই নিয়ে ব্যস্ত। কত কত ছবি তুলছে। আর পোজ দিচ্ছে। মেজমামার ফুরসত নাই তাদের নিয়ে। বিগবি (বড় ভাই) আশু আপুর (মামাতো বোন) ছবি তুলছে। আমাদের ছবি তুলছে, বাবার সাথে। খুবই মজা হচ্ছে। এই ফাঁকে বড়মামা, বাবাকে নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে গেল। আমাদের কূপণ দেখে খাবার দিয়ে দিল। মেন্যু ভালো ছিল। মুরগী, কোরমা, পোলাও, সবজি, জর্দা একেবারে বিয়ের আয়োজন। যাক, খাওয়াদাওয়া করে আবারও আনন্দ। এবার গানের আসর শুরু হলো। সাথে বাদ্যবাজনা ও অনেক শিল্পী ছিল। তবে সেন্ট প্লাসিডের অনেক ছাত্র গানের সাথে যুক্ত থাকায় তারাও গান করল। খুবই সুন্দর হচ্ছে। গানের তালে তালে নাচ হচ্ছে। আমাদের ছোট রুমাইসা দুই বছর বয়সী, সবাই তাকে কোলে নিয়ে নাচছে। মোটামুটি ভীষণ খুশি রুমুমনি। একেতো ঠান্ডা আবহাওয়া, রোদের কোনো দেখাই নেই। তার মধ্যে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তারপরেও অন্যরকম আনন্দ পাচ্ছি। আছরের পর শুরু হলো র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান। আমাদের পরিবারের সকলে র‌্যাফেল ড্রতে অংশগ্রহণ করছে, তবে পুরস্কার পেয়েছে আহনাফ, রুমাইসা, সুবাবা। র‌্যাফেল ড্র হওয়ার পর কিছু খেলাও হয়েছেবালিশ খেলাতে পুরস্কার পেয়েছে আবিদ মামা। সবকিছু শেষ হলো মাগরিবের পর। আবারও বিকালের চা পর্ব শেষ করে গাড়িতে উঠে তৃতীয়বার নাস্তা দিল। আমাদের গাড়ি ফেরার জন্য রওনা দিল। সবাই ক্লান্ত দেহে বাসের সিটে ঝিমিয়ে পড়ছে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৯:৩০ মিনিট। আল্লাহর রহমতে ভ্রমণ শেষ হলো। আমি প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবো সেন্ট প্লাসিডের স্কুলের পিকনিক কমিটির আয়োজকদের, সাথে সাথে আমার বড়মামাকেও যাদের জন্য বনভোজনের এত সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করেছি এবং এই সুন্দর পরিবেশে আনন্দ করেছি। শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে এমন একটি দিন উপহার দেওয়ার জন্য, স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ ভ্রমণটা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার দেশ
পরবর্তী নিবন্ধআরব্য রজনীর লা’ইব