আধুনিক জীবনকে গতিশীল করতে যানজটমুক্ত জীবনের বিকল্প নেই

| বৃহস্পতিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে আবার ফিরে এসেছে অসহ্য যানজট। দিন নেই, রাত নেই; যানজট এখন চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে- অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশীরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরী অন্যতম মেগাসিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠার বড় অন্তরায় যানজট। গত ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘কেন এত যানজট, কার কী যুক্তি/ সড়কে ধীর গতি, স্থবির নগরীর জীবনযাত্রা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । এতে বলা হয়েছে, ‘যানজটের কবলে পুরো নগরী স্থবির হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল, এরপর সন্ধ্যা গড়াতেই স্থির হয়ে যায় পুরো নগরী। ধীর গতিতে চলতে চলতে কোনো মতে গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের। এভাবেই চলছে নগরীর যানবাহন। সঙ্গে যোগ হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ, দুর্বিষহ ভোগান্তি আর সময়ের অপচয়। যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রতিটি পদক্ষেপই ক’দিন যেতে না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। নগরী যানজট নিয়ে চলছে নানা পক্ষের নানা মন্তব্য। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, জনবল সংকটের কারণে যথাযথ কাজ করা যাচ্ছে না। যাত্রীরা বলছে, ট্রাফিক পুলিশ ঠিক মত দায়িত্ব পালন করছে না। নিজেরা নিজেদের মত করে বসে, দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে, নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সড়ক ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকা, গাড়ি থামার নির্দিষ্ট স্টেশন না থাকা, নিয়ম মেনে গাড়ি না চালানোর কারণেই মূলত নগরীতে নিয়মিত যানজট হচ্ছে।’ দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে অনেক সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। বস্তুত যানজটের কারণে চট্টগ্রামবাসীর সামগ্রিক জীবনধারাই পাল্টা গেছে। একসময় এ শহরে ৩০ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে অনেক সময় চলে যায়। এখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সামান্য দূরত্ব অতিক্রম করতেও কত সময় লাগবে আগের থেকে অনেক বেশি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া মানুষ এখন আর কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা চিন্তাও করে না। এই বিচ্ছিন্নতা যে সমাজে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কিছুদিন আগে নগরের যানজট নিরসন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল। বৈঠকে বলা হয়েছে, নগরে সাড়ে তিন লক্ষ যান্ত্রিক যান ও প্রায় তিন লক্ষ রিকশা চলাচল করে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল এবং টানেল নির্মাণ শেষ হলে গাড়ির চাপ বাড়বে শহরে। এতে বাড়বে যানজটও। এমনিতে নিত্য যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গাড়ির চাপ বাড়লে তা হবে আরো অসহনীয়। এ অবস্থায় যানজট নিরসনে গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এজন্য প্রয়োজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ। বৈঠকে শহরের প্রবেশপথে বেসরকারি কন্টেনার ডিপো এবং নগরে প্রায় ৭০ হাজার অবৈধ রিকশাকে যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা দখল করা হচ্ছে। ফলে সময়-অসময়ে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে দোকানপাট গড়ে ওঠার কারণেও তীব্র যানজট হচ্ছে। এগুলো উচ্ছেদ করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে। যানজট নিরসনে প্রথমেই যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। যানজট জনজীবনে অস্বস্তি আর দুর্ভোগের বড় কারণ। তাই আধুনিক গতিময় জীবনকে আরো গতিশীল করতে যানজটমুক্ত জীবনের কোনো বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে