কক্সবাজারের উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের মামলায় রিমান্ড শেষে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মহেশখালী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর খায়ের হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শ্রীজ্ঞান তঞ্চংজ্ঞা।
কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে মহেশখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়ের হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার দুপুরে তাকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসাদ উদ্দিন মো. আসিফের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর তাকে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (গতকাল) আদালতে নেওয়া হলে খায়ের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আদালত তাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, এই মামলা এবং ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সংক্রান্ত জাতীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়েছে; যা উচিত ছিল না বলে মন্তব্য করেছে বিচারক। এই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারের আগে ১৬৪ ধারার মতো গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় রাষ্ট্রীয় দলিল দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া এবং গ্রেপ্তারের আগে ১৬৪ ধারায় বর্ণিত আসামিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করার কারণে নথি সংরক্ষণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান করেছে আদালত।
১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ৪ মে আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনির আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। জবানবন্দির বরাতে দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, সাগরে নিহত ১০ জনই জেলেবেশি ডাকাত (জলদস্যু) ছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবে সাগরে জেলের বেশে নেমেছিলেন ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে। এদের মধ্যে সামশু মাঝির ট্রলারে চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের সাইফুল ইসলামকে পাঠিয়েছিলেন মুনীর। এ ঘটনায় কাউন্সিলর খায়েরও জড়িত। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গিয়াস উদ্দিন মুনির চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে।
এর আগে আসামি বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি এবং মাতারবাড়ির কামাল হোসেন প্রকাশ বাইট্টা কামাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত–পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ ও একটি কঙ্কাল। ডিএনএ পরীক্ষার পর এ ৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।