আত্মসমর্পণের পর কারাগারে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি

আদালতে হাজির করা হয় প্রদীপকেও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৪ মে, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলায় অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন। দীর্ঘ সময় পলাতক থাকার পর তিনি এ আত্মসমর্পণ করেন। একপর্যায়ে তার পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত তা নাকচ করে দিয়ে চুমকি কারনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গতকাল দুপুরের দিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এদিকে গতকাল একই আদালতে দুদকের করা উক্ত মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন। চুমকি কারনের জামিন শুনানি শেষ হলে বিকাল ৩টার দিকে আদালত তার সাক্ষ্য নেন। তিনি ছিলেন এ মামলার সর্বশেষ সাক্ষী। এসময় চুমকি কারনের পাশাপাশি প্রদীপ কুমার দাশও কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। দীর্ঘ দিন পর একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন তারা। এ সময় মাঝে মাঝে তাদেরকে কথা বলতেও দেখা গেছে। এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগার থেকে প্রদীপ কুমার দাশকে আদালত কক্ষে হাজির করা হয়। মামলার অপর ২৩জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করবেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। এরপর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করবেন আদালত।

এসব বিষয়ে দুদক পিপি মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, আজকের (গতকাল) প্রথম বিষয় ছিল চুমকি কারনের আত্মসমর্পণ। যাইহোক আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিনের জন্য একটি আবেদন করেন। আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম। সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর মাধ্যমে শেষ হলো এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম।

চুমকি কারনের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী রেজা আজাদীকে বলেন, আমার মক্কেল অসুস্থ ছিলেন। তাই এতোদিন আত্মসমর্পণ করতে পারেন নি। এখনো তিনি অসুস্থ। এরপরও আত্মসমর্পণ করেছেন এবং জামিন চেয়েছেন। আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আশা করছি, সেখানে জামিন পাব। এতোদিন চুমকি কারন কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, তিনি দেশেই ছিলেন। উল্লেখ্য ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক, চট্টগ্রাম কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটির তদন্তও করেন দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জুলাই প্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে তিনি চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্জন এবং হস্তান্তরের অপরাধ করেছেন প্রদীপ-চুমকি।

নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কঙবাজারে ফ্ল্যাট রয়েছে প্রদীপের, অভিযোগপত্রে এসবও উল্লেখ করা হয়। আদালত সূত্রে জানায়, চার্জশিট দাখিল পরবর্তী গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত এবং উভয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহামারী আর যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধবে টার্মিনালের নকশা করতে কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ৩১ মে