ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর ভিন্ন অভিযোগে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে।
আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে নূর ও তার ছয় সহযোগীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।
ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণী মামলা করার পর তা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এই বিক্ষোভ করছিল নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বিডিনিউজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বের হওয়া মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে গোলযোগ বাঁধে। নূরসহ সাতজনকে সেখানে আটক করে পুলিশ।
তখন ডিএমপি’র উপ-কমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স) ওয়ালিদ হোসেন বলেছিলেন, “পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।”
তবে রাত ১০টার দিকে নুরকে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পুলিশের হামলায় আহত পরিষদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
তখন জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “নুরকে আটকই করা হয়নি। অনুমতি ছাড়া মিছিল করায় তাকে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত পাঁচজন পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তারা হলেন এ এইচ আই সুজন চন্দ্র দে, এ এইচ আই গোলাম হোসেন, জাহিদ হাসান, মঞ্জুরুল হক ও কামাল হোসেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী গতকাল রবিবার রাতে লালবাগ থানায় নূরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
মামলার প্রধান আসামি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুন যিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। নূর এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।
পরিষদের আরও দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) ও কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকে(২৩) মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, “হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঐ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।”
মামলার প্রতিক্রিয়ায় হাসান আল মামুন বলেন, “মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যে অভিযোগের কথা বললেন, এমন কোনো কিছু আমাদের দ্বারা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা প্রতিবাদ জানাব।”
এরপরই সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে পরিষদের নেতা-কর্মীরা।
এসময় নূর, পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, সোহরাব হোসেন, রাশেদ খান, মোহাম্মদ আতাউল্লাহসহ অর্ধশত নেতা-কমী উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা এই মামলাকে ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও যড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বেলা ১টার দিকে ঐ ছাত্রীকে মামুন লালবাগের নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে তার বাসায় যেতে বলে। ঐ ছাত্রীর ভাষ্য, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়।
এরপর মামুনকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা শুরু করেন বলে ঐ ছাত্রীর অভিযোগ।
তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ২০ জুন নুরের কাছে অভিযোগ করেন ঐ ছাত্রী। নূর তখন ‘মীমাংসার আশ্বাস’ দিলেও পরে অবস্থান পাল্টে তাকে ‘বাড়াবাড়ি করতে’ নিষেধ করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, “নূর বলছে, আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, তাহলে তাদের ভক্তদের দিয়ে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদ গত বছর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন নুর। এক সময় তিনি ছাত্রলীগে যুক্ত থাকলেও এখন তিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কড়া সমালোচক।