আজ আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস

ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

২০০৩ সালে জাতিসংঘ পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আমাদের দেশেও এ দিবস পালিত হয় প্রতিটি বছর। পর্বতমালা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর পর্বতসমূহকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৩২)। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাহাড়-পর্বত প্রকৃতির অপরূপ দান। বাংলাদেশের মোট ভূমির এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। আমার শৈশব কৈশোরের স্মৃতি মধুর সময় কেটেছে সবুজ ঘেরা লাল মাটির পাহাড বেষ্টিত শিক্ষা সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় ঐতিহ্যে মহিমান্বিত পুণ্য ভূমি চুনতি গ্রাম ও চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়ের মাঝে মনোরম জয়নগর আবাসিক এলাকা।
দক্ষিণ কোরিয়া থাকাকালীন স্বল্প সময়ে সিউল এলাকায় ও আশেপাশে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছি, বিশেষ করে ওদের খুব পছন্দের এবং জনপ্রিয় ছোটখাট এবং সুউচ্চ কয়েকটি পর্বত আরোহণ করেছি। যেখানে গিয়েছি সব জায়াগায় লক্ষ্য করেছি, পাহাড় রক্ষা করে সড়ক তৈরি ও নানান কাঠামোর অবস্থান। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অপরূপ সবুজে ভরা নানান জাতের গাছ নিয়ে নৈসর্গিক সৌন্দযের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ পাহাড় নিরাপদ, যা সহজেই আপন করে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের। শ্যামল বৃক্ষরাজির মাঝ দিয়ে আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ যেন সবুজ সুড়ঙ্গের দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে।নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়া ঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে সুনিপুণ শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। শিল্পীর এ আঁচড় খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই প্রতি বছর কোরিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন। পরিচ্ছন্ন পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করেন। গাড়িতে এবং পরে কয়েক ঘণ্টা হাঁটার পর পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছে পেলাম অন্যরকম এক পরিবেশ, কোন দোকান বা স্টল নেই, হাজারো পর্যটক আসছে যাচ্ছে কিন্তু কোথায়ও কোন ময়লা আর্বজনা, ছেড়া কাগজ পলিথিন কিংবা ফলের খোসা নেই। বসার জন্য কয়েকটা ছাদর বিছিয়ে একটা জায়গা ঠিক করা হলো। কিছুক্ষণের অপেক্ষা, এবার নামতে হবে,আমাদের দলের নেতা মিঃ লী জানান দিলো আমরা যে পথ দিয়ে নামবো খুব কঠিন পথ, তিন চার জায়গায় দড়ি বেয়ে নামতে হবে। সবাই মিলে পুরো জায়গাটা পরিস্কার করে তারপর আবার হাঁটা শুরু করলাম। কয়েক জায়গায় রশি বেয়ে নামতে হলো, নানা কঠিন পথ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা হাঁটছি, পথের দু’ধারে লক্ষ্য করলাম কোথাও কোন ধরনের পাহাড় ধস নেই। কোন ময়লা আবর্জনা এমনকি গাছের পাতাও পড়ে নেই, পথের পাশে শুকনো গাছের পাতাগুলো অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমে আর পর্বতের কর্মীরা মিলে সারাক্ষণ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করছে। আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলো এভাবে সাজানো যেতে পারে। এদিকে আমাদের দেশে আমরা দেখি পাহাড় ধসের সৃষ্ট দুর্যোগ। যা খুব ভয়াবহ, প্রাণ ও সম্পদহানি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এই পাহাড় রক্ষা করতে হবে। পাহাড়ের মাটি নিয়ে অন্যত্র ভরাট, রাস্তা তৈরি বন্ধ করতে হবে। পাহাড় কাটার কারণে ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। বন্য প্রাণী ও জীব বৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে সবুজ শ্যামল বনাঞ্চল। পাহাড় কেটে নয়, অপরিবর্তিত রেখে নগর ও গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। এই বিষয়ের সরকারের সাথে সাথে আমরা সবাই যথাযথ সচেতন হয়ে পাহাড় রক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারী! তুমি সব সম্পর্কের ওপরে মা
পরবর্তী নিবন্ধব্রণ সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাসমূহ