আজাদীর প্রতি অদম্য ভালোবাসা

নুসরাত সুলতানা | সোমবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

আমার মনে আছে, আমাদের শিশুবেলায় আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে, আজাদীর প্রকাশনার ২৬/২৭ বছর থেকেই নিয়মিত আমাদের ঘরে আজাদী নেওয়া হতো। এ পত্রিকা ছিলো আমার আব্বুর প্রিয় পত্রিকা। আব্বু মারা যাওয়ার পর আব্বুর ‘শোক সংবাদ’ চট্টগ্রামে শুধুমাত্র আজাদীতেই আমরা দিয়েছিলাম। একদিনের জন্যেও আমাদের ঘরে আজাদী নেওয়া বন্ধ ছিলো না। শুধুমাত্র করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে আমাদের বাসায় সব ধরনের পত্রিকা নেওয়া বন্ধ।
১৯৯৮ সালের ২রা নভেম্বর আজমিশালী’র ‘স্বপন পারের ডাক শুনেছি’ ফিচারে আমার প্রথম লেখা “স্বপ্নে একদিন” শিরোনামে প্রকাশিত হয় । অন্যরকম আনন্দ নিয়ে এরপর থেকে নিয়মিত লেখা পাঠাতাম। তখন সবেমাত্র এইচএসসি পাশ করেছি। অনার্সে-মাস্টার্সে পড়ার সময় ৯৮ সাল থেকে ২০০৩/০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত আমার লেখা আসতো আজাদীতে। আব্বু আম্মু ঘুম থেকে জেগেই বলতেন আজ তোমার লেখা এসেছে পত্রিকায়। খুশিতে সারাদিন মনে হতো আজ যেনো ঘরে কোনো উৎসব। তখন অনলাইনের যুগ ছিলো না। আমার কলেজের ঠিকানা কিংবা বাসার ঠিকানা থাকতো লেখার নিচে। শত শত পাঠক ওই ঠিকানায় চিঠি পাঠাতেন। আনন্দে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে যেতো, আবার লজ্জাও পেতাম। অনেকগুলো চিঠি এখনো আমার সংগ্রহে আছে। আমার নিয়মিত কাজ ছিলো সাদা কাগজের এক পৃষ্ঠায় স্পষ্ট অক্ষরে লেখা কমপ্লিট করে নিজেই পোস্ট অফিসে গিয়ে আজাদীর ঠিকানায় লেখা পোস্ট করা। এটার জন্য আমি অনেক অনেক সময় দিতাম। তখন অনেক ‘মিলন মেলা’ হতো কিন্তু আমার কখনোই আজাদী অফিসে কিংবা মিলন মেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই আজাদীর সংশ্লিষ্ট কারো সাথেই কখনো আমার দেখা হয়নি। আজ এই লেখাটা লিখতে গিয়ে তখনকার সেই সময়ের আজমিশালী কিংবা আনন্দনের নিয়মিত লেখকদের নাম চোখে ভাসতে লাগলো। আজমিশালীর বিভাগীয় সম্পাদক সানজিদা মালেক, খোলা জানালার লেখক সিদ্দিক আহমেদ, উদ্দেশ্যহীন এর হাসান আকবর, স্ক্রিন এর শৈবাল চৌধুরী, শুধু ছবি নয় এর তাপস বড়ুয়া, কান্তা, আসমা বীথি, সব্যসাচী, নিউটন মজুমদার, লাজিমা জেসমিন, মোঃ রেজাউল করিম, গোফরান উদ্দীন টিটু, সাবরিনা সবুর, জুলিয়াস, এরকম আরো অনেকেই ছিলেন তখন।
পরবর্তীতে পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলাম আজাদী থেকে। বাসায় নিয়মিত ‘আজাদী’ আর ‘প্রথম আলো’ নেওয়া হলেও দেখা যেতো নিয়মিত আমার পত্রিকা পড়ার সময় টুকুন হয়ে উঠতো না । পত্রিকা নিয়মিত পুরোটা পরতে না পারলেও সকালবেলা আজাদী শব্দ টা দেখেই আমার দিন শুরু করতে হয়। আজাদী পত্রিকা না দেখলে সারাদিন মনের মধ্যে উসখুস করতে থাকে। আবার এই করোনাকালে পত্রিকা নেওয়া বন্ধ হলে, অনলাইনে নিয়মিত দুইটা পত্রিকায় চোখ বুলাতে শুরু করলাম। এই করোনাকালেই বাচ্চাদের স্কুলের আর পড়াশোনার চাপ কিছুটা কমে গেলে আমি নিজের জন্য সময় বের করে নিলাম। আগের অভ্যাসবশত অনেকগুলো বড় বড় লেখা পাঠিয়ে পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না দেখে আজাদীর প্রতি অভিমানও করলাম। কিন্তু যার প্রতি অদম্য ভালোবাসা থাকে, যাকে বাদ দিয়ে একদিন ও থাকা যায়না, তাকে বেশিক্ষণ দূরে ঠেলে রাখা যায় না, অভিমান তার প্রতি বেশিক্ষণ থাকেও না। তাই আবার ছোট ছোট করে লেখা পাঠাতে শুরু করলাম, প্রিয় আজাদীতে। আমাদেরকে চমকে দিয়ে লেখা আসতে শুরু করলো। আমার এই লেখার ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, আজীবন যেন সবার ভালোবাসা, দোয়া আর সহযোগিতা নিয়ে আজাদীর সাথে থাকতে পারি এটাই এখন একমাত্র কামনা। আজাদীর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতা
পরবর্তী নিবন্ধআস্থা ও ভালবাসার প্রতীক আজাদী