প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল গতকাল রাতে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে। রাত ৮টার দিকে এটি মোংলার দক্ষিণ–পশ্চিম দিক দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এটি আজ সকাল নাগাদ স্থলভাগে উঠে আসবে। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাসমূহ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। হাতিয়ায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বরগুনার অর্ধলাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বৃদ্ধ ও পটুয়াখালীতে পানির ঝুঁকি থেকে বোন ও ফুফুকে বাঁচাতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবক নিহত হন। সাতক্ষীরায় উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে; এতে বনের প্রাণির প্রাণহানির আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।
এর আগে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কঙবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ০৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।
হাতিয়ায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত : গতকাল দুপুরে জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪–৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। এতে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নসহ আশপাশের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার মো. দিনাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, পানিতে ভেসে গেছে গবাদিপশুর খাদ্য ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে শাকসবজিসহ নানা ফসলের জমি।
বরগুনার অর্ধলাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে : উপকূলীয় জেলা বরগুনার চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। জেলার নদ–নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পায়রা–বিষখালী নদীর ১৪টি খেয়া পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রগুলোতে রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল থেকে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বৃদ্ধের মৃত্যু : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় গ্রামের বাসিন্দা শওকাত মোড়ল (৬৫) বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।
পটুয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যুবক নিহত : পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের পানির ঝুঁকি থেকে বোন ও ফুফুকে বাঁচাতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীফের ফুফু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ার চর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিলেন। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে যান।
এ সময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। পরে একঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।