আগ্রাবাদ আমেরিকান হাসপাতাল ঘিরে অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির সিন্ডিকেট

জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযান ডাক্তার যে ওষুধ লেখেন তা হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি ছাড়া কোথাও মেলে না

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ জুন, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আগ্রাবাদস্থ আমেরিকান হাসপাতালে (কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে) অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ চিত্র উদঘাটন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ অভিযানে দেখা গেছে, ডাক্তার, দালাল, ফার্মেসি মালিক এবং তথাকথিত ল্যাব মিলে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। দেশে বিক্রি নিষিদ্ধ এমন সব ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতেন সরকারি ডাক্তার। ফার্মেসিতে একটি ক্রিম বিক্রি হলে ডাক্তার কমিশন পান ২শ থেকে ৫শ টাকা। ল্যাবে ব্লাড পরীক্ষার নামেও হাতিয়ে নেয়া হয় টাকা। ভাগবাটোয়ারা চলে সমানতালে। অভিযানে তিনটি ফার্মেসি থেকে ৬ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়। জরিমানা করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এবং হাসপাতালের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে অভিযানকালে জানানো হয়। একসময়কার চর্মরোগের অত্যন্ত জনপ্রিয় হাসপাতালের নাম আগ্রাবাদের আমেরিকান হাসপাতাল। শুধু শহরেরই নয়, দূর দূরান্ত থেকেও শত শত মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু নানামুখী অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত হাসপাতালটি এখন জনভোগান্তির মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অসুস্থ মানুষদের পুঁজি করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল আমেরিকান হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই সময় বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে দেখা যায় যে তাতে বিক্রি নিষিদ্ধ বিভিন্ন ওষুধ ও ক্রিমের নাম লেখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার লুৎফর রহমান রাহাতের প্রেসক্রাইব করা বেশ কয়েকটি প্রেসক্রিপশন পাওয়া যায় যেখানে অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়েছে। সরকারি ডাক্তার কি করে অনিবন্ধিত ওষুধ প্রেসক্রাইব করলেন তার কোনো সদুত্তর তাৎক্ষনিকভাবে মিলেনি। রোগীরা জানান, হাসপাতালের ডাক্তার যেসব ওষুধ লিখেন সেগুলো হাসপাতালের সামনের ফার্মেসি ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। শহরের নামি দামি কোন ফার্মেসিতেই এসব এসব ওষুধ মিলে না। হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে গেলে এক একটি ক্রিমের দাম ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়।

অভিযানকারী দল হাসপাতালের গেটের সামনে থাকা মা ফার্মেসি, মা মেডিকেয়ার ও স্বাগতা ফার্মেসি থেকে ছয় লাখ টাকারও বেশি দামের অনিবন্ধিত ঔষধ জব্দ করে। চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের এসব ওষুধ সংঘবদ্ধ চক্রটিই আমদানি করে।

ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অভিযানে গেলে রোগীরা জানায়, ডাক্তাররা ঔষদ লেখেন যা মা ফার্মেসি, মা মেডিকেয়ার ও স্বাগতা ফার্মেসিতে থাকে। অন্য কোথাও এসব ঔষধ পাওযা যায় না। রোগীদের সাথে থাকা প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের দেওয়া স্লিপে বিভিন্ন অনিবন্ধিত ঔষধ লেখা রয়েছে। একজন ফার্মেসি মালিক জানিয়েছেন, প্রতিটি বিদেশি ক্রিমের দাম এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। ফার্মেসী মালিকরা বলেছেন, সরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররাই জব্দকৃত অনিবন্ধিত ঔষধ প্রেসক্রাইব করছেন। প্রতি ক্রিমে ডাক্তার ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন পান বলেও ফার্মেসি মালিকেরা স্বীকার করেন। ফার্মেসি তিনটিকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

অভিযান প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত আজাদীকে বলেন, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে পড়তে হয়। প্রতীক দত্ত বলেন, স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে কথা বলে এসকল অসাধু ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফীন বলেন, জব্দকৃত ওষুধ গুলো ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের নিবন্ধিত নয়। আইনানুযায়ী এগুলো কোন ফার্মেসিতে বিক্রি করা যাবে না এবং কোন ডাক্তার এগুলো প্রেসসক্রিপশন করতে পারবেন না। কিন্তু আমেরিকান হাসপাতালের ডাক্তার তা করেছেন। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ম্যজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানান, এই হাসপাতালের সকল রোগীদের গোসাইলডাঙ্গার গলির ভিতরে গড়ে তোলা মেডিলিড নামের একটি ল্যাবে টেস্ট করানোর জন্য বলে দেয়া হয়। ডাক্তারেই রোগীদেরকে দালালদের হাতে তুলে দেন। হাসপাতালের ডাক্তার লুৎফর রহমান রাহাত রোগীদেরকে এই ল্যাব ছাড়া অন্য কোথাও টেস্ট করা হলে দেখবেন না বলে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন বলেও রোগীরা জানিয়েছেন।

মেডিলিড নামের ল্যাবে রোগীদের ইচ্ছেমতো দর ধরে গলা কাটে বলেও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। ডাক্তার এবং ল্যাবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘অনুমোদন ছাড়া পশুর হাট বসানো যাবে না’
পরবর্তী নিবন্ধবিকেল ৫টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে চায় চসিক