আগুন আতংক কাটছে না রোহিঙ্গাদের

টেকনাফ প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

গত দুই সপ্তাহে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আতংক কাটছে না রোহিঙ্গাদের। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ এর দিকে উপজেলার কুতুপালং ৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের একটি ঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়। ক্যাম্পে অগ্নি নির্বাপণের কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ আসলেও পুড়ে গেছে ২০টির বেশি ঘর। এ ঘটনার মাত্র ৪ দিন আগে ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে একই ক্যাম্পের সি ব্লকে প্রথমে আগুন লাগে। প্রায় তিন ঘন্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় চারটি ব্লকের ৮৪২টি ঘর ও লার্নিং সেন্টার, মসজিদসহ ১২২ টি বিভিন্ন স্থাপনা।

নতুন বছর শুরুর আগের দিন ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ব্লকে ঘটা অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয় ৭৬টি বসতঘর।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উখিয়া স্টেশন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো রাত্রিকালীন, আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক সাড়া দেই। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ৫ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারটি ব্লকে ছড়িয়ে পড়া আগুন, আমাদের ১১ টি ইউনিট সেখানে কাজ করেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা পৃথক তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গৃহহীন হয়েছে। অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় অব্যাহত আছে।

উখিয়ার ২৬ টি ও টেকনাফের ৭ টি মিলিয়ে কক্সবাজারের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাস করছে। ক্যাম্পে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৫ টি ছোটবড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো ২০২১ সালের ২২ মার্চ তিনটি ক্যাম্পে এক সঙ্গে অগ্নিকাণ্ড। সে সময় ১১ জনের মৃত্যু ও ৫ শতাধিক আহত হন। পুড়ে গিয়েছিল ১০ হাজারের বেশি ঘর। গত বছরের মার্চে ১১ নং ক্যাম্পে আগুন দিয়েছিল দুবৃর্ত্তরা। ওই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ২২০০ ঘর, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। কিছু সময় কমে গেলেও পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ছড়িয়েছে ক্যাম্পগুলোতে বাস করা রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংকউৎকন্ঠা।

৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, আগুনের ভয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কখন কি হয় জানিনা, পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণ স্পষ্ট না হলেও প্রতিটিতে দুর্ঘটনার তুলনায় নেপথ্যে নাশকতার তথ্য পাওয়া যায়। রোহিঙ্গাদের দুই উগ্রপন্থী সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশান (আরএসও) এর মধ্যে বিবাদমান আধিপত্য বিস্তার দ্বন্দ্ব বারবার নাশকতার জন্ম দিচ্ছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী ।

তিনি বলেন, আরসা ও আরএসওর দ্বন্দ্ব থামছে না। ক্যাম্পে গোলাগুলি, হত্যা, অগ্নিকাণ্ডসহ সবকিছুর নেপথ্যে তারাই। একপক্ষ আরেক পক্ষ দমাতে সমর্থকসহ সদস্যদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে নাশকতা তৈরি করছে।

আইনশৃক্সখলায় নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সবসময় তৎপর। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের সদস্যরা কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডসহ নাশকতায় জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাজনে বিশাল প্রাচীন নগরীর সন্ধান
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় পার্টি থেকে বাদ কাজী ফিরোজ ও সুনীল শুভরায়