আক্রান্তের হার বাড়ছে শিশু-কিশোরদের

বড়দের কারণেই ঝুঁকিতে তারা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১০ দশমিক ৬১ শতাংশই শিশু-কিশোর। যাদের বয়স শূন্য থেকে ২০ বছর। সর্বশেষ গত তিনদিনে ৯৬ জন শিশু কিশোর আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী আছে ২৪ জন। বাকি ৭২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর।
চিকিৎসকরা বলছেন, বড়দের কারণেই ঝুঁকিতে আছে শিশু-কিশোরগণ। বড়দের মাধ্যমেই সংক্রমিত হচ্ছে তারা। কারণ র্দীঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কম বয়সীরা ঘরের বাইরে তেমন যাচ্ছে না। বিপরীতে প্রয়োজন এবং বিনাপ্রয়োজনেও বের হচ্ছেন বড়রা। ফলে অবচেতনে তারা সংক্রমিত হচ্ছেন। আবার উপসর্গ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত ছোটদের সংর্স্পশ থেকে নিজেদের আলাদাও করে নেয় না বড়রা। এমনকি অনেক পরিবারে বড়দের উপর্সগ থাকলেও নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ না আসা পর্যন্ত ছোটদের সংর্স্পশ ছাড়েন না। ফলে অজান্তেই বড়দের কাছ থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোরদের মাঝেও। তাই পরিবারের শিশুদের স্বার্থে বড়দের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ। শিশুদের যে কোনো উপসর্গ দেখা যাওয়া মাত্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।
বাড়ছে আকান্তের হার : কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য নিয়ে সিভিল সার্জনের প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে জানা গেছে, এ পর্যন্ত শুন্য থেকে ২০ বছর বয়সী শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ৪৮৩ জন। এর মধ্যে শুন্য থেকে ১০ বছর বয়সী আছে এক হাজার ১৯১ জন। যা মোট শনাক্তের দুই দশমিক ৫২ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী আছে তিন হাজার ২৯২ জন। যা মোট শনাক্তের ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এদিকে গতকাল সেমাবার ৩১ জন শিশু-কিশোর শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী আছে ১১ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী আছে ২০ জন। আগেরদিন রোববার ২১ জন শনাক্ত হয়। যাদের পাঁচজনের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছর এবং ১৬ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গত শনিবার ৪৪ জন শিশু-কিশোর শনাক্ত হয়। যাদের মধ্যে ৮ জনের বয়স শুন্য থেকে ১০ বছর এবং বাকি ৩৬ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর।
চিকিৎসকরা যা বলছেন :
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঘরে থাকলেই নিরাপদ। তাই বাচ্চাদের বাইরে বের হতে দেয়া যাবে না। যদি নিতান্ত নিয়ে যেতেই হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকেও বড়দের মতো মাস্ক পরাতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এ শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনাভাইরাসের এখন যে ভেরিয়েন্ট তাতে উপসর্গহীন লোকজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বড়রা যখন আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সংস্পর্শে যাওয়া শিশুরাও অজান্তেই সংক্রমিত হচ্ছে। তাই বয়স্ক যারা বাইরে বের হন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে পরিবারের সদস্যদের কথা চিন্তা করে। পরিবারের শিশুর কথাটিও তাদের ভাবতে হবে। আবার বয়স্করা যখন আক্রান্ত হবেন বা তাদের সর্দি, কাঁশি, জ্বর হবে তখনই তাদের আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। না হলে তাদের জন্য শিশুরাও ঝুঁকিতে থাকবে। এ ছাড়া পরিবারে বয়স্কদের উচিত ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশুদের সর্দি, কাশি, জ্বর আসলে অবহেলা করা যাবে না। আগে অনেক সময় মা-বাবা এক-দুইদিন দেখতেন বা অপেক্ষা করতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা করা যাবে না। সাথে সাথেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এই জ্বর, সর্দি বা কাঁশি যে করোনাভাইরাসের কারণে হচ্ছে না তা বলা যাবে না। তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
শিশুদের মানসিক সার্পোট দেয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, অনলাইনে যেসব ক্লাশ হচ্ছে সেখানে অংশগহ্রণ করতে হবে। তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভিডিও বার্তায় কথা বলিয়ে দিতে পারেন অবিভাবক। প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ব্যায়াম করাতে হবে। সকাল ১০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত একদিন পর পর রোদে নিতে হবে শিশুদের। এতে সে ভিটামিন ডি পাবে যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৃষি অর্থনীতির সঙ্গে শিল্পেও বিশেষ নজর : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত