আকাশে আকাশে ওড়াউড়ি

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মেয়ে সানজিদা, ছোটবেলা থেকেই এরোপ্লেনের প্রতি আগ্রহটা ছিল বেশি। সবসময় বাবাকে বলতেন খেলনা এরোপ্লেন কিনে দিতে, আর কিনে দিলে তা নিয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিতেন।
বড় হয়েও যেন এরোপ্লেন নিয়ে কাজ করতে পারেন এমনই স্বপ্ন ছিল তার। তাই কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হন।
সফলভাবে কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজি থেকে অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তিনি বর্তমানে পৃথিবীর বিখ্যাত জার্মান এয়ারলাইন্স লুফথানসার এমআরও কোম্পানি লুফথানসা টেকনিকে মালটা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করছেন।
সানজিদা তার বর্তমান অবস্থানের পিছনে কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজির ভূমিকা নিয়ে বলেন, “এই এভিয়েশন কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ খুবই সুন্দর। আমি এই কলেজে বিভিন্ন এয়ারক্রাফট সম্পর্কে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বিএসসি অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত চার বছরের অনার্স কোর্স যেখানে আট সেমিস্টার পড়াশোনা করে আপনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিওনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, এয়ারপোর্ট ডিজাইন এন্ড প্ল্যানিং, স্যাটেলাইট, স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, রোকেট্রি, রাডার সিস্টেমস, রিমোট কন্ট্রোল সেন্সিং সিস্টেমস, হিউমান মেকানিক্স, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমস, এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স ম্যানেজমেন্ট, এয়ারক্রাফট ডিজাইন, গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন ডিজাইন এন্ড মেইনটেনেন্স, রেডিও ইলেকট্রিকাল সিস্টেমস, এয়ারক্রাফট ইন্টেরিওর , জেট ইঞ্জিন ডিজাইন, জেট ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স, থার্মাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, স্পেসক্রাফট কনস্ট্রাকশন এন্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, রাডার ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রপালশন ইঞ্জিনিয়ারিং, থার্মোডাইনামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, এরোডায়নামিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স, রেডিও টেকনোলজি, স্যাটেলাইট এন্ড টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে কাজ করতে পারবেন।”
তিনি আরো বলেন, “এখানে বিএসসি ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৬০ ক্রেডিট অধ্যয়ন করবেন যা আপনাকে ইলেকট্রিকাল, ইলেকট্রনিক্স এন্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে চাকরি পেতে সুযোগ দেবে। তাছাড়া মধ্য প্রাচ্যের এয়ারলাইন্স এমিরেটস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য যে এয়ারলাইন্স গুলি বাংলাদেশে ফ্লাইট অপারেট করে সেগুলিতে রয়েছে কাজ করার সুযোগ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শুধুমাত্র এই বছর অথবা পূর্ববর্তী বছর এইচএসসি/এ লেভেল পাস করা শিক্ষার্থীরা বিএসসি অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনার্স কোর্সে আবেদন করতে পারবে। এভিয়েশন সেক্টরে রয়েছে চাকরির বিশাল সম্ভাবনা। এই মুহূর্তে এভিয়েশন সেক্টরে বিপুল দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে দক্ষ জনবল সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এভিয়েশন ম্যানেজমেন্টে এবং অ্যারোনটিক্যাল ও এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার এটাই আদর্শ সময়।”
কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজি বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত (কলেজ কোড : ৬৬২০) ও অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম থেকে পড়তে আসা আরেক শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার বলেন, “ছোটবেলা থেকেই মনে স্বপ্ন ছিল এয়ারলাইন্সে কাজ করার। তাই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছি এবং বর্তমানে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে কাজ করছি।”
বিজনেস স্টাডিস বিভাগ থেকে জিপিএ পাঁচ পেয়ে এইচএসসি পাস করার পর আরিফা কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ভর্তি হন।
আরিফা বলেন, “বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এভিয়েশন সেক্টরে দিন দিন ক্যারিয়ার প্রসারিত হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে নিত্যনতুন বিষয়ও যোগ হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায়৷ শিক্ষার্থীদের সামনে পেশাজীবনে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনা। তরুণরা খুঁজে পাচ্ছে নতুন দিকনির্দেশনা। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু বিষয়৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো বিবিএ (অনার্স) ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট৷ বিবিএ ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট হলো বিমানবন্দর, এয়ারলাইন্স,এভিয়েশন হসপিটালিটি, বিমান ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত চার বছরের অনার্স কোর্স। এখানে আট সেমিস্টার পড়াশোনা সম্পন্ন করে আপনি বিমানবন্দর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অপারেশন, এয়ারলাইন্স মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ফাইন্যান্স, এয়ার হোস্টেস, এয়ারলাইন্স অপারেশন, বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা, ই-কমার্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, এয়ারলাইন্স ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরে কাস্টমস, ই-টিকিটিংসহ, জিডিএস প্রোগ্রামে বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। এখানে বিবিএর ৬০টি ক্রেডিট পড়াশোনা করবেন যা আপনাকে ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, বীমা, বিক্রয় ও বিপণন, বিসিএস, সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে সব ধরনের চাকরি পেতে সুযোগ দেবে।”
তিনি আরো বলেন, “তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্স এমিরেটস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও অন্য যে এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইট অপারেট করে সেগুলোতে রয়েছে কাজ করার সুযোগ। বিজনেস স্টাডিজ অথবা মানবিক অথবা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শুধু এই বছর অথবা পূর্ববর্তী বছর এইচএসসি/এ লেভেল পাস করা শিক্ষার্থীর বিবিএ এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট অনার্স কোর্সে আবেদন করতে এইচএসসিতে ন্যূনতম ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। আগ্রহী প্রার্থীর এইচএসসিতে অ্যাকাউন্টিং অথবা বিজনেস অর্গানাইজেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট অথবা অর্থনীতি অথবা ফিন্যান্স, ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স অথবা প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড মার্কেটিং অথবা স্ট্যাটিসটিক্স অথবা অর্থনীতি অথবা উচ্চতর গণিতের মধ্যে যেকোনো একটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩.০০ থাকতে হবে৷ এভিয়েশন সেক্টরে রয়েছে চাকরির বিশাল সম্ভাবনা।”
কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করে সানজিদা ও আরিফার মতো অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানির বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানিতে চাকরি করছেন৷ অনেকে বিশ্বখ্যাত ইউনির্ভাসিটিগুলোতে স্কলারশিপে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছেন৷ এদেশে সর্বপ্রথম কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে বিবিএ (অনার্স) ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট ও বিএসসি (অনার্স) ইন অ্যারোনটিক্যাল এবং এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু হয়।
আগ্রহী শিক্ষার্থীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার কলেজ অব এভিয়েশন টেকনোলজিতে সরাসরি গিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে৷ আরও জানতে ০১৯২৬৯৬৩৬৫৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা হাসপাতালে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে দ্বিতীয় ডোজ নিলেন আরও ১৪ হাজার মানুষ