আকাশসীমা লঙ্ঘনে দুঃখ প্রকাশ মিয়ানমারের

বিজিবি-বিজিপি বৈঠক ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে আকাশসীমা লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গতকাল রোববার কঙবাজারের টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি এ প্রতিশ্রুতি দেয়।

প্রায় তিন মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে সীমান্তে অস্থিরতা চলছে। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছেন। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গোলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট সংলগ্ন বিজিবির সোদান রেস্ট হাউজে এ পতাকা বৈঠক সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বিকাল ৩টায় শেষ হয়। বৈঠক শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় টেকনাফে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নে প্রেস ব্রিফিং করে বিজিবি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, বৈঠকের শুরুতে বিজিবি সীমান্তের গোলাগুলি বিষয়ে আলোচনা করে। সেখানে একাধিকবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা পড়া ও মিয়ানমারের হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লংঘনের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এজন্য বিজিপির পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে এরূপ ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি-বিজিপি একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

শেখ খালিদ বলেন, বৈঠকে বিজিপির পক্ষে অভিযোগ করা হয়, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে সীমান্তে নানা অপরাধ করছে। বিজিবি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিজিবির পক্ষে জানানো হয়, কখনও কোনো সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনো প্রকার সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের কোনো সহায়তা করে না। ভবিষ্যতেও সন্ত্রাসীদের রোধে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মিলেমিশে কাজ করতে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের সাতজন এবং বাংলাদেশের আটজন প্রতিনিধি ছিলেন।

এ সময় উপস্থিত বিজিবির রামুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ জানান, পতাকা বৈঠকটি নিয়মমাফিক বৈঠকের একটি অংশ। গত তিন মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বৈঠক করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হন। এ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিজিপির কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানোও হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজি হয় এবং বৈঠক আন্তরিক পরিবেশে শেষ হয়।

তিনি জানান, গতকাল সকাল ৯টায় দুটি স্পিড বোটযোগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির প্রতিনিধি দল পৌঁছে। এরপর বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার এবং বিজিপির পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিয়ানমারের পিউন ফিউর ১১ বর্ডার গার্ড পুলিশের অধিনায়ক কর্নেল ইয়ে ওয়াই শো। বৈঠকটি নিয়ম মতো অব্যাহত রাখার জন্য উভয় সীমান্ত বাহিনী রাজি হয়েছে বলে তিনি জানান।

পারস্পরিক যোগাযোগ সুদৃঢ় করার তাগিদ : টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাড়াও অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার রোধে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। দুটি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, আস্থা এবং নির্ভরতার পরিবেশ তৈরির জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কঙবাজার পিবিজিএমএস গ্রুপ কমান্ডার, এফআইজি লে. কর্নেল তারিক কবীর, ভারপ্রাপ্ত অপারেশন অফিসার লে. এম মুহতাসিম বিল্লাহ শাকিল উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজানুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় এক শিফটে
পরবর্তী নিবন্ধশিশুকে গাছে বেঁধে মারধর করা হল মাথা ন্যাড়া