আকর্ষণ লাল কাঁকড়ায়

উখিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৫ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

বিপন্ন প্রাণী বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব রক্ষায় উখিয়ার সমুদ্র সৈকতে কিছু অংশকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঘোষিত ‘লাল কাঁকড়া’ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণে ভূমিকা রাখবে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের চাপ, অসংরক্ষিত অঞ্চলসহ নানা কারণে উখিয়ার সমুদ্র সৈকতের এ অংশের লাল কাঁকড়া প্রজনন ক্ষেত্র হুমকির সম্মুখীন। বিপন্ন সামুদ্রিক এ প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় অচিহ্নিত এলাকাটিকে সংরক্ষিত করতে চলতি বছরের এপ্রিলে উদ্যোগ গ্রহণ করে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। পরে বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব বেষ্টনি তৈরি, বৃক্ষরোপণ, আলোকায়নসহ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সুরক্ষিত পর্যটন বলয় তৈরির কার্যক্রম শুরু হয় এবং যার নামকরণ করা হয়েছে ‘লাল কাঁকড়া বিচ’।
লাল কাঁকড়া বা রেড গোস্ট কার্ব সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া ৬,৭৯৩টি কাঁকড়া প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কঙবাজারের বালিয়াড়ি জুড়ে সৌন্দর্য বর্ধনকারী প্রাণী হিসেবে এ লাল কাঁকড়ার প্রজনন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বায়োটার্বেশনের মাধ্যমে মাটির ভৌত ও জৈব-রাসায়নিক গুণাগুণের বা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে খাদ্য চক্রে বিভিন্ন জীব-অনুজীব ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার মত পরিবেশ তৈরি করতে উপযোগী লাল কাঁকড়া বায়োটার্বেটর হিসেবেও পরিচিত।
সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হকের মতে, কক্সবাজার অঞ্চলের সৈকতে লাল কাঁকড়া অবিকল্প পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি জানান, ভূ-রাসায়নিক, জৈবিক, ভৌত এবং জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে এই প্রাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিতে তার বিস্তৃত সেবা সম্পর্কে গবেষণায় দিনদিন নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন কমিউনিটি ফর ন্যাচার (আইইউসিএন) এর ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় লাল কাঁকড়াকে বাংলাদেশের সংকটাপন্ন প্রাণীর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এর অর্থ হলো, বিগত ১০ বছরে অথবা তিনটি প্রজন্মের মধ্যে কাঁকড়ার প্রজাতিটির ৫০% বিলুপ্ত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে।
জানা গেছে, এক সময় সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানীসহ টেকনাফ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে লাল কাঁকড়ার ব্যাপক বিচরণ দেখা গেলেও বর্তমানে উল্লিখিত স্থানগুলোতে প্রাণীটির উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে, উখিয়ার পর্যটন কেন্দ্র ইনানী সৈকতের প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে বাইলাখালী অংশে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে এখনো দেখা মিলে অসংখ্য লাল কাঁকড়ার সুনিপুণ বিচরণ।
উখিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি এস এম আনোয়ার জানান, কয়েক দশক আগে থেকে সমুদ্র উপকূলবর্তী এ এলাকাগুলোকে ইকো ক্রিটিকাল এরিয়া – ইসিএভুক্ত ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু এসব এলাকায় প্রাণী বৈচিত্র্যের গুরুত্ব থেকে যায় অবহেলিত।
উখিয়া উপজেলা প্রশাসন অন্তত দেরীতে হলেও লাল কাঁকড়ার সুরক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধির ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘লাল কাঁকড়ার প্রজননে প্রতিবন্ধকতা রোধের পাশাপাশি সংরক্ষিত অঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় পর্যটকদের উদ্দেশ্যে ৬টি নির্দেশনা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ও দেয়া হয় সেখানে।’
৬ টি নির্দেশনায় মধ্যে উক্ত স্থানের কাঁকড়াকে বিরক্ত না করা, আগুন না জ্বালানো, শব্দ না করা, গাছের পাতা না ছেঁড়া, ময়লা না ফেলা ও সৈকতে বাইক না চালানোর জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করা হয় বলে জানান ইউএনও।
এদিকে সম্প্রতি এই উদ্যোগের মাধ্যমে সৈকতে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নামে পরিবেশ ধ্বংস ও বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ তোলে স্থানীয় একটি মহল। ফলে সৈকত অংশে আলোকায়নের জন্য লাগানো বাতি সরিয়ে নেয় উপজেলা প্রশাসন। যদিও ইউএনওর দাবি কোনো প্রকারের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, উখিয়া উপজেলাকে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক কাজী সামশুর রহমানের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধহাসিনার জনসভাকে জনসমুদ্র করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা