আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গা উদ্ধার করতে গতকাল দুপুর নাগাদ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে পরিচালিত অভিযানে আউটার স্টেডিয়ামে গড়ে ওঠা বাগান বিলাস এবং গোধুলী বেলা সহ সব স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। খেলার মাঠকে আক্ষরিক অর্থে মাঠে পরিণত করে আউটার স্টেডিয়ামের ঐতিহ্য ফেরাতে জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করেছে বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রেভেনিউ ডেপুটি কালেক্টর নু এ মং মারমার নেতৃত্বে পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানে নগর পুলিশ সদস্যরাও অংশ নেন।

চট্টগ্রামের খেলাধুলার ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বহু কৃতী খেলোয়াড় সৃষ্টির সূতিকাগার চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম অবৈধ দখলদারদের করুণ শিকারে পরিণত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খেলার মাঠ অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা এবং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ওই সময় আউটার স্টেডিয়ামে অবৈধ দখলদারদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা একমত হন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। এরপর গত ২ মার্চ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সহকারী কমিশনার ভূমিকে সাথে নিয়ে আরো একদফা আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান। সেখানে আউটার স্টেডিয়ামের সীমানা চিহ্নিত করে লাল দাগ দিয়ে দেয়া হয়। তখন বলা হয়, ওই লাল দাগের ভেতরে থাকা সব স্থাপনাই অবৈধ। তিনি লাল দাগের ভেতরে পড়া অবৈধ সব স্থাপনাকে ১৬ মার্চের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। ১৭ তারিখ সরকারি ছুটি থাকবে। ১৮ মার্চ যদি কোনও অবৈধ স্থাপনা থাকে তাহলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় একদিন বাড়তি সময় দিয়ে গতকাল দুপুর থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র এবং সরজমিনে পরিদর্শনে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১২ টায় অভিযান শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে সময় বেধে দেওয়া হলেও কোনও স্থাপনা বা মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়নি। গতকাল উচ্ছেদ অভিযানের খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত তাদের মালামাল সরাতে শুরু করেন। দুপুরে মাঠের উত্তরপূর্ব কোণ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এরপর মাঠের পূর্ব পাশে থাকা বাগান বিলাস সহ অন্যান্য সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে শিমু পার্কের বিপরীত দিকে থাকা গোধুলী বেলা সহ অন্য সব স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে স্থাপনাগুলোতে ‘মহামান্য হাইকোর্টের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে’ বলে সাইনবোর্ড টানানো দেখা গেছে। কিন্তু অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া রেভেনিউ ডেপুটি কালেক্টর নু এ মং মারমা লো প্রশাসনের কাছে এ ধরনের কোনও তথ্য প্রমাণ নেই বলে জানান। অভিযানকালে তিনি বলেন, সরকারের নীতি হচ্ছে খেলার মাঠে শুধু খেলা হবে, আর কোনও কিছু হবে না। খেলার মাঠ মুক্ত থাকবে। অবৈধ দখলদারদের দাপট চিরতরে বন্ধ করে আউটার স্টেডিয়ামকে খেলাধুলার সূতিকাগারে পরিণত করা হবে। তিনি বলেন, এই আউটার স্টেডিয়াম জাতীয় মানের অনেক খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। তাই আউটার স্টেডিয়ামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের হারানো ঐতিহ্য উদ্ধারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজকের উচ্ছেদ অভিযান তার প্রথম ধাপ। তিনি বলেন, এই মাঠ আবার খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধিদের সাথেও মাঠ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারাও খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে আগ্রহী বলে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। আর এরই প্রেক্ষিতে আউটার স্টেডিয়ামকে খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করে রেভেনিউ ডেপুটি কালেক্টর নু এ মং মারমা বলেন, উচ্ছেদের কাজ শেষ হয়েছে। উদ্ধারকৃত সীমানা ধরে আউটার স্টেডিয়ামের চারদিকে ঘেরাও দেয়া হবে। এরপরই শুরু হবে মাঠের উন্নয়ন কাজ। এই মাঠ আবারো মাঠ হয়ে উঠবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অপরদিকে গতকাল উচ্ছেদ চলাকালে আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশের দোকানদাররা প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, এই স্থাপনা তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন। তার উপর এসব স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা কোনও কিছুই শুনতে চায়নি। এম এ হোসাইন বাদল নামে যে ব্যক্তি এসব জায়গা লিজ নিয়ে স্থাপনা গড়েছেন তিনি বলেন, আমি টেন্ডারের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন থেকে এইসব জায়গা ইজারা নিয়েছি। এরপর আমার নিজের অর্থায়নে স্থাপনা গড়ে তুলেছি। সিটি কর্পোরেশনের জায়গা কিভাবে আরেকটি সংস্থা ভেঙে দিতে পারে ? তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক মৌখিকভাবে ১৭ মার্চের মধ্যে সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতে বললেও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। কিন্তু কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে আামাদের সবকিছু গুড়িয়ে দেওয়া হলো। বিকেলে আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে এই উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন দোকানদাররা। তারা বলেন, আবারো তারা হাইকোর্টে যাবেন। তারা তাদের স্থাপনা ফিরে পেতে আইনি লড়াই করবেন।

এর আগে ১৯৯৯ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা মিলে আউটার স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে সময় দৈনিক আজাদীর সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের নেতৃত্বে ওই মার্কেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ। তখন ২০০০ সালে সে মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আর কোনও দোকান কিংবা মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি। এরই মধ্যে একাধিকবার আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু মেলার কারণে তার সুফল মেলেনি। প্রায় ১৮ বছর পর গত ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আউটার স্টেডিয়ামের উত্তর এবং পূর্ব পাশের ফুটপাত এবং সংশ্লিষ্ট নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হিসেবে এম এ হোসেন বাদলের সাথে পাঁচ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে সে অংশটি ইজারা দেয়। আর সে হিসেবে তিনি মাঠের চারপাশে এই সব স্থাপনা গড়ে তোলেন। যেহেতু এইসব স্থাপনা আউটার স্টেডিয়ামের সীমানার মধ্যে পড়েছে তাই এ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপারেশন সার্চ লাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন জেনারেল ইয়াহিয়া
পরবর্তী নিবন্ধসীমা গ্রুপের পরিচালক সান্টুর জামিন হয়নি