আইন না মেনে পণ্য বোঝাই বিদেশি জাহাজকে জরিমানা

ফের আলোচনায় ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন এ্যাক্ট

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশী জাহাজের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রণীত ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন এ্যাক্ট নিয়ে দেখা দেয়া সংকট আবারো মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। আইন না মেনে পণ্য বোঝাই করায় বিদেশি জাহাজকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার এক ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের সরকারি বেসরকারি মালিকানাধীন দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজকে সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন এ্যাক্ট’২০১৯ নামের একটি আইন রয়েছে। দেশীয় জাহাজ শিল্পকে সুরক্ষা দিতেই মূলতঃ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের প্রেক্ষিতে বিদেশি জাহাজগুলোকে দেশের বন্দরের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে বাংলাদেশি আমদানি কিংবা রপ্তানি পণ্য পরিবহন করতে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার (পিওএমএমডি) থেকে অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পিও, এমএমডি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওশনগোয়িং শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট বন্দরে দেশীয় পতাকাবাহী কোনও জাহাজ নেই বা পরবর্তী ১৫দিনের মধ্যে উপস্থিত হওয়ার সিডিউল নেই মর্মে নিশ্চিত হওয়ার পরই বিদেশি জাহাজকে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র বা ওয়েভার সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ উপস্থিত বা আসার সিডিউল থাকলে ওই পণ্য আর বিদেশি কোনও জাহাজ লোড করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে আইনটি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই আইনের প্রয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে ছাড়পত্র ইস্যু নিয়েও দেখা দেয় সমস্যা। বিদেশি জাহাজগুলোর স্থানীয় এজেন্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, জাহাজে পণ্য বোঝাইয়ের ছাড়পত্র নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আট দশদিনও লেগে যাচ্ছিল ছাড়পত্র পেতে। অবশ্য সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর তিনদিনের মধ্যে ছাড়পত্র ইস্যুর ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে তিনদিনের মধ্যে ছাড়পত্র ইস্যুর ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হলেও বিদেশি জাহাজগুলোকে ওয়ানওয়ে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। যাতে সিংগাপুর কিংবা কলম্বো থেকে পণ্য বোঝাই করতে পারলেও তারা ফিরতি পথের পণ্য বোঝাই করতে পারছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওয়েভার সনদ না পেয়ে ‘এমভি হানসা হামবুর্গ’ নামের একটি বিদেশি জাহাজ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে জাহাজটি চট্টগ্রাম কলম্বো রুটে নিয়মিত কন্টেনার পরিবহন করতো। এই জাহাজটি প্রত্যাহার করার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নড়েচড়ে বসে এবং জরুরি বৈঠক করে তিনদিনের মধ্যে ছাড়পত্র ইস্যুর ব্যাপারটি নিশ্চিত করে।

বিদেশি জাহাজের পণ্য পরিবহন নিয়ে বিরাজিত সংকটের মাঝে এমভি কানওয়ে ফরচুন নামের একটি জাহাজকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট ট্রিডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেডকে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের ব্যাংক হিসেবে জরিমানার টাকা পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়েছে। জাহাজটিকে ওয়েভার সার্টিফিকেট প্রদান না করলেও তারা পণ্য পরিবহন করায় এই জরিমানা করা হয় বলে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের গত ১৫ মার্চের স্মারক নং৪০২.০০৯.০০৩,০০,০০,০০১/২০১৩/ ১১২৪ () জানানো হয়েছে। জাহাজটির ওয়েভার সনদের আবেদন নাকচ করে তিনদিনের মধ্যে তা জানানো হয়। অথচ তারা দেশের প্রচলিত আইন না মেনেই পণ্য বোঝাই করে। বিষয়টি আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে উক্ত জরিমানা করা হয়েছে।

মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জরিমানা আরোপের কথা স্বীকার করে বলেন, ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল প্রোটেকশন এ্যাক্ট দেশের প্রচলিত আইন। এই আইন মেনেই বিদেশিদের শিপিং ব্যবসা করতে হবে। তারা আইন লংঘন করায় জরিমানা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এভাবে আইন নিয়ে কড়াকড়ি করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। কারণ আমাদের সব পণ্য পরিবহন করার সক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের পণ্য পরিবাহিত হয় ৯০টি ফিডার ভ্যাসেলে। সেখানে আমাদের দেশীয় জাহাজ রয়েছে মাত্র ৮টি। এই ৮টি জাহাজ দিয়ে ৯০টি জাহাজের পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে না। এখন বিদেশি ফিডার ভ্যাসেলগুলো পণ্য পরিবহন করতে এগিয়ে না আসলে সংকটে পড়তে হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে চিন্তাভাবনা করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালুরঘাট সেতুর উচ্চতা প্রতিবন্ধকের সঙ্গে পিকআপের ধাক্কা
পরবর্তী নিবন্ধকেন্দ্রের বাইরে ইভিএম মেশিন নিলেন যুবলীগকর্মী