আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভর করে আ. লীগ আজ ক্ষমতায় আছে : খসরু

নগরীতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ সংবিধানকে সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণকে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্নভাবে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে।

এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে গেলে জনগণের সম্মান, আস্থা ও বিশ্বাস আপনাদের অর্জন করতে হবে। অন্যথায় দেশে আইনের শাসন প্রবর্তন করতে পারবেন না। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সংবিধান রক্ষা করতে পারবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনারা আজ ব্যর্থ।

তিনি গতকাল বুধবার ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন, ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস ও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমেদ সড়কে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার ও ভিপি হারুনুর রশীদ।

খসরু বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায় আছে। তারা আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকি বসবাস করছে। সামনে আরো একাকি হয়ে যাবেন। তখন আর জনগণের কাছে যেতে পারবে না। তখন আপনাদের আশ্রয়স্থল হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কিছু কর্মকর্তা ও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা।

তারা কি আপনাদের বাঁচাতে পারবে? রক্ষা করতে পারবে?

এসময় তিনি বলেন, যাদের উপর তারা ভর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) আমরা বার্তা দিচ্ছি, আপনারা দেশের সংবিধান অনুযায়ী জনগণকে দৈনন্দিন সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সন্ত্রাসীদের বাধাগ্রস্ত করবে। সাংবিধানিক অধিকার কেউ বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

খসরু বলেন, বাকশালের সময় হাজার হাজার মানুষকে ও মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে রক্ষীবাহিনী। সে সময় তারা রাষ্ট্রের সব সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে। সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্র প্রধানের হাতে তুলে দিয়েছে। বর্তমান দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে রক্ষী বাহিনী হয়ে না যায় সে আহ্বান তাদের জানাই।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকারকে পতন ঘটানো। বিএনপি সে রাস্তায় চলছে। আমীর খসরু বলেন, বাকশালের মতোই ক্ষমতাসীন সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হনন করছে। বাকশাল হচ্ছে ভোট চুরির মেশিন। ১৯৭৫ সালে এ দিনে নির্বাচনে যাতে তাদের যেতে না হয় সব দল বন্ধ করে বাকশাল নামক একটি স্বৈরাচারি দলের জন্ম তারা দিয়েছিল। অর্থ্যাৎ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার তাদের কোনো ইচ্ছা ছিল না। সাথে সাথে তারা আইনের শাসনকে নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিল। আইনের শাসনের অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তারা হনন করেছিল। আজকেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই। সেদিনও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হয়েছিল। সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। চারটি সরকারি পত্রিকা রাখা হয়েছিল। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যেমে জনগণের জানার অধিকারকে তারা আজ ভূলুন্ঠিত করতে চাইছে।

খসরু বলেন, সব ব্যাংক এখন খালি। রিজার্ভ খালি। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার নোট নতুন করে ছাপানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দশ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পাচার করে দেশে দেশে ঘরবাড়ি করেছে। দেশের মানুষের জন্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না ডলার নেই বলে। যার জন্য দ্রব্যমূল্যর দাম আজ আকাশচুম্বী।

তিনি বলেন, যারা জনগণের অর্থ চুরি, ব্যাংক লুটপাট, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের কোনো সমস্যা নাই কারণ তাদের পকেট ভর্তি টাকা। পণ্যর বাজারমূল্য যতই বাড়ুক তাদের সমস্যা হবে না। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। তারা বেহেশতে আছে। তাদের আগামীর বেহেশতের দরকার নাই। আগামীর বেহেশতে যাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা। যারা নির্যাতিত হচ্ছে, কারাবরণ করছে, অত্যাচারে মারা গিয়েছে তারাই বেহেশতে যাবে।

আবু সুফিয়ান বলেন, পলোগ্রাউন্ডের জনসভার পর আজকে এবং ২৪ তারিখের গণমিছিলে চট্টগ্রামবাসী আবারো প্রমাণ করেছেন দখলদার, অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট সরকারকে জনগণ আর চায় না। আজকে আবারো বার্তা দিয়েছেন দখলদার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হও।

জালাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা আওয়ামী লীগ নামে দল করার জন্য শহীদ জিয়ার কাছে দরখাস্ত দিয়েছিলন। শহীদ জিয়া অনুমোদন দিয়েছিলেন। অথচ আজকে আওয়ামী লীগ বড় বড় কথা বলছে, তাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের ঠেলায় মানুষ আজ অস্থির। এখন তারা নাকি স্মার্ট বাংলাদেশ করবে। ব্যাংক খালি করা স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা চাই না।

হারুনুর রশীদ বলেন, ওবায়দুল কাদের কথায় কথায় বলে খেলা হবে। কিন্তু কি খেলা হবে ? এই কাদের তো ভুয়া কাদের। কিছুদিন আগে ওর ভাই বলেছিল আওয়ামী লীগের নেতারা পালানোর জন্য দরজা খুঁজে পাবে না। উনি কি খেলা খেলবেন। এখন সময় এসেছে, এখন খেলবে বিএনপি।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু ও মো. কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড আবদুস সাত্তার, শফিকুর রহমান স্বপন, ইসকান্দর মির্জা, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব সালাউদ্দিন, অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, আবুল হাশেম, এনামুল হক এনাম, জসিম উদ্দিন শিকদার, অ্যাড. ইফতেখার মহসিন চৌধুরী, মাহবুব আলম, আবুল হাশেম, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, আনোয়ার হোসেন লিপু, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মোস্তাফিজুর রহমান, মুজিবুর রহমান, অ্যাড. আবু তাহের, মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপার্শ্ববর্তী গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা
পরবর্তী নিবন্ধজনগণের জানমাল রক্ষায় রাজপথে আছে আ. লীগ