অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাত অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার শঙ্কা

বেতন-ভাতা ও মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব, আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে অলস জাহাজের সংখ্যা, আজ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতনভাতা এবং মজুরি নিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। আগামী ১০ মার্চ থেকে সারাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন খাতে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে খুলনা বিভাগীয় জাহাজ মালিক সমিতি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। আগামী ৬ মার্চ লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের একাধিক সংগঠন জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। উক্ত বৈঠক থেকে ৬০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করে প্রকাশ করে গেজেট বাতিলের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার আভাস দেয়া হয়েছে। অপরদিকে আমদানি কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অলস জাহাজের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গতকাল কর্ণফুলী নদীতে সাত শতাধিক জাহাজ অলস ভাসছিল বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাখ লাখ টন পণ্য দেশের নানা স্থানে পরিবহন করা হয় লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে। দেড় হাজারেরও বেশি লাইটারেজ জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরে ভয়াবহ রকমের সংকট বিরাজ করছে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও এক ট্রিপ ভাড়া পাচ্ছে না বহু জাহাজ। কোনো কোনো জাহাজ দেড় থেকে দুই মাস অপেক্ষা করে এক ট্রিপ ভাড়া পাচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি চাহিদার তুলনায় বেশি জাহাজ তৈরি করায় পুরো সেক্টরে সংকট তৈরি হয়েছে। ভাড়া না থাকায় বর্তমানে লাইটারেজ জাহাজের অপারেটিং কস্টই আয় করতে পারছেন না বহু জাহাজ মালিক। অনেকেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে জাহাজ তৈরি করলেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। ভাড়ার অভাবে পুরো সেক্টরে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থার মাঝে সম্প্রতি শ্রমিকদের মজুরি ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চলছিল। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ইতোমধ্যে সভা সমাবেশ করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মজুরি ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের সংগঠনগুলো মজুরি বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে একতরফা হিসেবে আখ্যায়িত করে কোনোমতেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখান করে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে উচ্ছ্বাস এবং মালিকপক্ষের প্রত্যাখানের মাঝে নতুন করে তৈরি হয় সংকট। এই সংকটের মাঝে খুলনা বিভাগীয় জাহাজ মালিক সমিতি বর্ধিত মজুরি দিয়ে কোনো অবস্থাতেই জাহাজ চালানো সম্ভব নয় জানিয়ে আগামী ১০ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। খুলনা জাহাজ মালিকদের মতো চট্টগ্রামসহ সারাদেশের জাহাজ মালিকেরাও একই পথ অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছে। একাধিক জাহাজ মালিক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের পক্ষে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়। এত বেতন দিয়ে কোনোভাবেই টিকে থাকা যাবে না।

জাহাজ মালিকেরা আজ ঢাকায় সচিবালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, একতরফাভাবে মজুরি বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আজ যদি সুরাহা হয় তাহলে তো ভালো। নাহয় আমাদের ১০ তারিখ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জাহাজগুলো সব অলস ভাসছে। এতে শ্রমিকদের খোরাকিসহ স্বাভাবিক খরচগুলো যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, আজ ভাড়ার জন্য অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা ছিল ৭২৩টি। এরমধ্যে মাত্র ২৪ জাহাজ ভাড়া পেয়েছে। বাকি ৬৯৯টি জাহাজই অলস ভাসছে।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভেনর নুরুল হক গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কোনো অবস্থা আমাদের নেই। আমরা ৬ তারিখ জাহাজ মালিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে সরকারকে আল্টিমেটাম দেব। ভাড়া বৃদ্ধির গেজেট বাতিল করা না হলে আগামী ১০ তারিখ থেকে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেটেলমেন্ট অফিসে শুনানিকালে দুই পক্ষের মারামারি, আহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধপার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে সমতলে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা