অপূর্ব

তারেক জুয়েল | শুক্রবার , ১৫ জুলাই, ২০২২ at ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ

ক্লাস ফাইভ থেকে আমরা একসাথে। বন্ধুর সাথে অনেক স্মৃতি। সুযোগ পেলেই বসে যাই আড্ডায়। পুরনো গল্পে, পুরনো স্মৃতিতে নতুন করে হাসি।
আজ ত্রিশ বছর পরেও আমরা একই আছি।
ভুল বললাম, একই ছিলাম অন্তত গতবার দেখা হওয়া পর্যন্ত। সেই রাতে খোলা আকাশের নিচে ওকে অন্যরকম লাগছিল ।
এক সময়ের দুর্দান্ত পেস বোলার। চিতার গতিতে দৌড়ে এসে ওর ছুড়ে দেওয়া বলের সামনে পরাস্ত ব্যাটসম্যান। লন্ড-ভন্ড তিনটা উইকেট। মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের চিৎকার। কাপ হাতে বিজয় মিছিলের নায়ক ছিল ও।
সহস্রবার বিজয় ছিনিয়ে আনা বন্ধুটির চোখে আজ জল। অস্বস্তি লাগে, কষ্ট লাগে, মানতে মন চায় না। আমি কথা বলি না, চুপ করে বসে থাকি, বলারতো কিছু নেই।
ও-ই বলে, ‘তোর মনে আছে খেলার সময় আমি উইকেট পেলে কিংবা সেঞ্চুরি করলে কি করতাম? অথবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা হাতে নিয়ে!’ মনে আছে, তুই আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলতি ‘বিধাতা, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।’ তুই কি জানিস আমি আজও বলি। প্রতিদিন বলি, প্রতিক্ষণে বলি। আমার চার মাসের ‘অটিস্টিক বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েও আমি চমকে উঠি! পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে, বন্ধুটিকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।
ও বুঝতে পারে, একটু সরে যায়, খোলা আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকায় আর বলে ‘বিধাতা, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ’
চোখে ভাসে, দুর্দান্ত সেই পেস বোলার,
দুই হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে আম্পায়ারকে বলছে ‘হাও ওয়াজ দ্যা…ট…ট…ট!’ আজ নির্লিপ্ত, সবচে বড় আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে একটিবারও বলছে না-
হোয়াই ওয়াজ দ্যাট!
ভালো লাগছিল না, আড্ডাটা জমলো না, চলে আসতে চাইলাম।
আসার সময় বন্ধুটি বলেছিল, ‘অটিস্টিক বাচ্চারা বিধাতার খুব প্রিয় হয়। সেদিক থেকে আমি লাকি, অনেক লাকি। আমার মেয়েটা হয়তো এই জীবনে লাকি হবে না কিন্তু জানি ওপারে বিধাতা সবচে সুন্দর জায়গাটা ওকে দেবে। তবে তোকে একটা অনুরোধ,
আমার মেয়েটাকে যখনি দেখবি তখন মন ভরে বলবি-
‘অপূর্ব!’
এতটুকুই চাওয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের দুরবিনে
পরবর্তী নিবন্ধসমুদ্র প্রভাবিত বাংলা কবিতা ও চিত্তের বিচিত্র তরঙ্গমালা