অপহরণ আতংকে যে সড়ক এড়িয়ে চলছে মানুষ

দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়ক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ উপজেলার পূর্বাংশ ও উত্তরে অবস্থিত ধোপাছড়ি ইউনিয়ন। সমতল, পাহাড় ও নদী পরিবেষ্টিত এই ইউনিয়নে বসবাস করে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। একসময় নদীপথই এই ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান সড়ক ও দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সংযোগ সড়ক হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পায়। ধোপাছড়ি ইউনিয়নে ৪ চাকার গাড়ি প্রবেশ করায় আনন্দিত হয় মানুষ। প্রয়োজনীয় কাজে দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া, কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করার সুযোগ হয়। মোটরসাইকেল, সিএনজি টেক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ পায় বেকার যুবকেরা।
সম্প্রতি এই দুটি সড়কে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকিত সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকরা। গত ১৪ অক্টোবর দিনে-দুপুরে দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়ক থেকে দুই মোটরসাইকেল আরোহী হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ভয়ে সাধারণ মানুষ ওই সড়ক দিয়ে তেমন যাতায়াত করছে না। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে ওই দুই ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার প্রায় আড়াই দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার কথা স্থানীয়রা জানালেও তাদের পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। মূলত ওই ঘটনার পর থেকে আতংকিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ, মোটরসাইকেল ও সিএনজি টেঙি চালকরা।
ধোপাছড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭-৮ বছর আগেও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নদীপথ। স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ধোপাছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়কে সংস্কার কাজ শুরু করেন। এই সড়কের জিরোবুক ছড়ায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করেন। এতে সাধারণ মানুষ নৌপথের বদলে সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পায়। কিন্তু ২ ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছেন। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়ে জিরোবুক সেতু পরিদর্শনে আসা পর্যটকের আনাগোনাও কমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা দিনের বেলায় পাখি ও পোকামাড়কসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকারির ছদ্মবেশে ২/৩ জন করে লোকালয়ে বিচরণ করে। পরে তারা পাহাড়ে একত্রিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, যুগ যুগ ধরে এখানে উৎপাদিত সবজি নদীপথে পরিবহন করতে গিয়ে নৌকা উল্টে ভেসে যেত। ঠিকমতো বাজারজাত করা যেত না। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। নৌকাযোগে রোগী নিয়ে ডাক্তারের কাছে কিংবা হাসপাতালে যেতেও কষ্টের সীমানা থাকত না। এর মধ্যে বিগত ৭-৮ বছর ধরে দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার সুযোগ পেয়েছিল জনগণ। মোটরসাইকেল, সিএনজি টেঙি ও ট্রাকযোগে পণ্য পরিবহন করার সুযোগ হওয়ায় চিন্তা ছিল না তাদের। কিন্তু এই সড়কে সম্প্রতি পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় অপহরণের ভয়ে সকলেই আতংকিত হয়ে পড়েছেন। সড়কটি নিরাপদ করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ মানুষ।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা আগে থেকেই ছিল। স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে তাদেরকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে। নিজেদের কার্য সম্পাদনের জন্য ওদের পক্ষ হয়ে কাজ করে। এদেরকে প্রতিরোধ করতে হলে সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলীম বলেন, সম্প্রতি ৫ নং ওয়ার্ডের গন্ডামারা এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেন ও নুর হোসেন নামে ২ ব্যক্তি অপহরণ ও মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ধোপাছড়িবাসী। অপহরণ আতংক বিরাজ করায় ধোপাছড়ির সাথে সংযোগ স্থাপনকারী খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান সড়ক ও দিয়াকুল-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সংযোগ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে দুই ভাইয়ের চার গরু চুরি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে পিডিবির একাধিক মনিটরিং ও টেকনিক্যাল টিম