অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ

প্রেসক্লাবের স্মারক বক্তৃতায় প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ ।। যে কোনো মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে যেতে পারতেন : ওয়াহিদ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেছেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে স্মরণীয় এক নাম। সততা, নীতি ও নিষ্ঠায় অবিচল থেকে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করে তিনি স্থাপন করেছেন এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের অনুপ্রেরণায় তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। তাঁর সম্পাদনায় দৈনিক
আজাদী পত্রিকা দেশের সংবাদপত্র জগতে অনন্য অবস্থানে পৌঁছে। তবে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি এই মানুষটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতিতেও যুক্ত হয়ে যান। চট্টগ্রামের যে কয়জন মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা ও ঘনিষ্ঠতা ছিল অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন তাদের একজন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে রাউজান আসনে মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ফজলুল কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে এমএনএ
নির্বাচিত হন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এস রহমান হলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মারক বক্তৃতা-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এই স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ এ কথা বলেন।
প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি-সাংবাদিক রাশেদ রউফ এবং অধ্যাপক খালেদের সন্তান মোহাম্মদ জহির।
যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।
প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ আরো বলেন, অধ্যাপক খালেদ ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। নিজের মধ্যে সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ নানা গুণের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন তিনি। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও উদ্যোগে তিনি ছিলেন নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে তার দৃপ্ত পদচারণা সমাজকে বারবার সঠিক পথের দিশা দিয়েছে।
স্মারক বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মধ্যে এতগুলো গুণের সম্মিলন থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন বিনয়ী একজন মানুষ। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে একেবারে কাছের হয়ে মিশে যেতেন। তাই সাধারণ মানুষও তাকে নিতান্ত কাছের মনে করতেন। তিনি একেবারে সাদামাটা জীবনাচরণ মেনে চলতেন। তার রুচিবোধ ছিল চিরায়ত বাঙালি। সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা ছিল তার নিত্য পরিচিত পরিচ্ছদ।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ একজন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিবিদ ছাড়াও তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল নিয়ে তিনি মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। বাংলার বাণীতে যোগদানের পর তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে আমি আজাদীতে যেতাম। তিনি আমাকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন খেলা কাভার করতে ঢাকায় পাঠাতেন। অত্যন্ত উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি।
দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, বহু গুণে গুণান্বিত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন একজন নিরহংকারী বিনয়ী মানুষ। আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে-অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মতো একজন গুণীজনকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে এবং তার সাথে কাজ করারও সুযোগ হয়েছে। উনার সাথে দেখা করতে বর্তমান নেতাদের মত কোনো প্রটোকল লাগত না। যে কোনো মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে যেতে পারতেন। আমি তাঁর নিকটাত্মীয় হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করি। তিনি এই প্রজন্মের তরুণদের অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মতো গুণী-সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিদের আর্দশকে ধারণ করার আহ্বান জানান।
কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে আমরা সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ হিসেবে শ্রদ্ধা করি। বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে একজন নেতৃত্বদানকারী মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ প্রজন্মের বাতিঘর। সততা, নিষ্ঠা ও নীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সন্তান স্লোগান পত্রিকার সম্পাদক মো. জহির বলেন, আমার বাবা ইতিহাসের সাথে জড়িত হয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বর্তমান সরকার আমার বাবাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে আমি বাবার পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলাম।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক আজাদীর বার্তা সম্পাদক দিবাকর ঘোষ, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, সহ সভাপতি স ম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির হায়দার, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, কার্যকরী সদস্য দেবদুলাল ভৌমিক এবং মনজুর কাদের মনজুসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক ও সুধীজনরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইইএলটিএস, টোয়েফল, স্যাট, বিবিএ(আইবিএ)-তে সাফল্য পেতে এক্সিকিউটিভ’স কেয়ার
পরবর্তী নিবন্ধডিএনএ পরীক্ষার পর দুই লাশ শনাক্ত, একজনের বিচ্ছিন্ন পা পরিবারের কাছে হস্তান্তর