কালবৈশাখীতে গ্রামেগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি

গাছ পড়ে ভেঙে গেছে বসতঘর, বিদ্যুতের খুঁটি তছনছ সবজি ও ধানক্ষেত

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৭ মে, ২০২৪ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

কালবৈশাখী ঝড়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোথাও কোথাও বসতঘর, দোকানপাট, গাছপালা, বৈদ্যুতিক মিটার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার ভেঙে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিচ্ছিন্ন থাকে। গাছ উপড়ে ও ভেঙে সড়কের উপর পড়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, প্রবল বাতাসে উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বসতঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই সাথে উপড়ে পড়ে শতাধিক গাছ। বাতাসে বৈদ্যুতিক তারের উপর ভেঙে পড়া গাছের কারণে বাড়বকুণ্ডসহ উপজেলার বেশকয়েকটি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এছাড়া বাড়বকুণ্ডের আর আর জুট মিল গেট এলাকায় হেলে পড়ে বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি। যার কারণে উপজেলা জুড়ে বন্ধ ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। রাত ১১ টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

লোহাগাড়া : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে গেছে ১৫টি খুঁটি, তার ছিড়ে গেছে ৫০ স্থানে, প্রায় ৮০ স্থানে তারের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুরো লাইন চেক করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন কর্মীরা। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, ঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন স্থানে বাতাসে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এছাড়া অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে ফসল, ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুপুর থেকে শুরু হওয়া ঝড় প্রায় দেড়ঘণ্টা তাণ্ডব চালায়। ঝড়ে অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উড়ে গেছে বসতঘরের টিনের চাল। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বড় বড় গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায় আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল। বোরো ধান, আম ও কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে উপজেলা ভূমি অফিসের একটি ভবন ভেঙে গেছে।

বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ঝড়ে টিন উড়ে এসে পড়ে আমলমগীর নামের এক অটোরিকশাচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, মিঠানালা, ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, কাটাছড়া ও ইছাখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি। কাটাছড়া ইউনিয়নের কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঝড়ে আমার ক্ষেতের এক হাজার ২৫০ পিস সাম্মাম গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অনেক গাছে ফলনও এসেছিল। আমার লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।’

আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়।

বোয়ালখালীতে গাছ পড়ে ভেঙে গেছে দোকান : বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, বোয়ালখালীতে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে দুটি দোকান ভেঙে গেছে এবং বাতাসে পাঁচটি দোকান ও একটি ঘরের চালের (উপরের) টিন উপড়ে পড়ে পড়ে যায়। উপজেলার খরণদ্বীপ ইউনিয়নের শ্রীপুর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। এসময় বারম্ভাঘাটে ফাতেমার চায়ের দোকান ও আঙ্গুর সওদারের মুরগির দোকানে গাছ পড়ে দোকান দুটি ভেঙে যায়। এতে দুটি দোকানের প্রায় ৭০৮০ হাজার টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

আঙ্গুর সওদাগর বলেন, দোকানের ভিতরে কর্মচারি ও কয়েকজন ক্রেতা ছিল। গাছ যখন ঝুঁকে পড়ছিল তখন দোকানের বাহিরে থাকা লোকজনের চিৎকারে দোকানের ভিতরে থাকা সবাই বেরিয়ে আসায় প্রাণে বেঁচে যায়।

চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কের একাধিক স্পটে উপড়ে পড়েছে গাছ : রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, ঝড়ো বাতাসের কারণে চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার একাধিক স্পটে উপড়ে পড়েছে গাছ। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসতঘর, গাছপালা, বৈদ্যুতিক মিটার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার ভেঙে পড়েছে। গতকাল দুপুরের পর তীব্র বৃষ্টি ও প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় এসব ঘটনা ঘটে। এছাড়া উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, লণ্ডভণ্ড হয়েছে জনপদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা বুড়িরদোকান, সৌদিয়াগেট, পৌরসভার কাদেরনগর, মডেল মসজিদ এলাকা, মরিয়মনগরের চৌমুহনী বিহার গেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

বাঁশখালী প্রধান সড়কের যোগাযোগ বন্ধ ছিল দীর্ঘক্ষণ : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে প্রধান সড়কের শীলকুপ এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে প্রধান সড়কে দীর্ঘক্ষণ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। শীলকূপ টাইম বাজারের উত্তরপাশে জাফর কনভেনশন হল সংলগ্ন এলাকায় সোমবার বিকালে একটি নিম গাছ ভেঙে পড়লে দীর্ঘ সময় যোগাযোগ অবস্থা বন্ধ ছিল। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগনের সহাযতায় গাছটি সরিয়ে নিলে যোগাযোগ অবস্থা স্বাভাবিক হয । এছাড়া এ ঝড়ো হওয়ার ফলে লবণ চাষী, লিচু চাষী সহ বিভিন্ন সবজি চাষীদের নানা ভাবে ক্ষতি হয়েছে।

চন্দনাইশে সবজি ও বোরো ধানের ক্ষতি : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশে কালবৈশাখীর ছোবলে তছনছ হয়ে পড়েছে সবজি ক্ষেত। পাকা, আধাপাকা বোরো ধানক্ষেত লুঠিয়ে পড়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি কাঁচা ঘর। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের তার ছিড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে হঠাৎ ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। সেই সাথে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা চন্দনাইশ ও দোহাজরী এবং ৮টি ইউনিয়ন কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়িঘরের চালা উপড়ে যায় বলে স্বস্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।

পটিয়াকর্ণফুলীতে লণ্ডভণ্ড গাছপালা : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়াকর্ণফুলীতে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে গাছপালা। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পিডিবি ও পল্লী বিদুৎতের বিদুৎ বিপর্যয়ে পটিয়া এবং কর্ণফুলীতে লাখ লাখ মানুষ অন্ধকারে ছিল। অনেকে মোবাইল চার্জ দিতে না পারায় বিভিন্নভাবে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদুৎ না থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন চার্জ লাইট, মোমবাতি ও খুপি জালিয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে দেখা যায়।

ঝড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশের গাছের ছোট বড় ঢালপালা মহাসড়কের উপর ভেঙে পড়ে। এতে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঢালপালা মহাসড়ক থেকে সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বভাবিক করেন।

রাউজানে ভেঙেছে বড় গাছ, কাঁচা ঘর : রাউজান প্রতিনিধি জানান, রাউজানে বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে বিদ্যুৎ খুঁটি, তার ছিড়ে বিপর্যয় ঘটেছে বিতরণ ব্যবস্থায়। উপজেলার বিভিন্ন্‌ রাস্তাঘাটে গাছ ও বিদ্যুৎ খুটি ভেঙে পড়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে ভর্তিতে লাগবে ডোপ টেস্ট
পরবর্তী নিবন্ধনগর ভবন হবে চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক