অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব

| মঙ্গলবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের আজ মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেকের আহ্বানে তিনি যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি সৎ সাংবাদিতার ইতিহাসে অনন্য ভূমিকা পালন করে গেছেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার জগতে একজন পথিকৃৎ। রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার এক আলোকবর্তিকা। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের বিশ্বস্ত সহচর।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন চট্টগ্রামে সাংবাদিক অঙ্গনের একজন আদর্শ। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদীর চেতনার একটি আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করেছেন আমৃত্যু। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবেও তাঁর অন্যতম ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আজ শুদ্ধাচারী রাজনীতির অভাব রয়ে গেছে। এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী রাজনীতিকে অর্থবিত্তের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এ অবস্থায় অধ্যাপক খালেদ হতে পারে অনন্য আদর্শ। এ কথা অনেকেই জানি যে, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে যেমন সত্যদ্রষ্টা ছিলেন, তেমনি একইভাবে সৎ রাজনীতিক হিসেবেও তিনি ছিলেন নির্লোভ। ৭০’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে ফজলে কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে তাকে বঙ্গবন্ধু নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচন করতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও আদেশ অনুযায়ী নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে ফজলুল কাদের চৌধুরীকে ধরাশায়ী করেছিলেন। এরপর অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি বাঙালি জাতিসত্তার উত্থানে আন্তরিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে খুব কাছ থেকেই যারা দেখেছেন, তারা জানেন- তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ মানুষ। তার মধ্যে সামান্য অহংবোধও ছিল না। একজন মানুষ হিসেবে তিনি মানুষের জন্যই নিবেদিত ছিলেন। তার কাছে মানুষ সবসময় সৎ পরামর্শ পেয়েছেন।
পদ পদবীর জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না। তাঁর আরাধ্য ছিল মানুষের কল্যাণ ও সমাজের প্রগতি। একজন সৎ মানুষ হিসেবে তাঁর সততার মাপকাঠি ছিল অনন্য উচ্চতায়। এ কারণেই তিনি আমাদের অন্তরে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সময়ের সাহসী ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি ছিলেন অধ্যাপক খালেদ। দেশের নানা উত্থান-পতন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও সামপ্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি চিন্তা করতেন বিবেক দিয়ে এবং আন্দোলনের কথা বলতেন অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে। তিনি ছিলেন আমাদের প্রগতিশীল ধারার বিবেকী কণ্ঠস্বর। ‘মুক্তিযুদ্ধে, সংবিধান প্রণয়নে এবং পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি ইতিহাসের প্রবাহ-পথে তাঁর স্থান নিয়েছেন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন’।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। কি সাংবাদিকতা, কি সমাজসেবা, কি শিক্ষা, কি রাজনীতি, কি সংস্কৃতি -প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। প্রতিটি বিষয়ে তিনি ছিলেন সমান ওয়াকিবহাল। সব বিষয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা ছিল বলে যে কোনো সভা-সমাবেশে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হতেন। তিনি যখন বক্তৃতা দিতেন, তখন সুন্দর সরল ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ শুনে উপস্থিত সকলেই মুগ্ধ হতেন। বেশি সময় ধরে বক্তৃতা দিতেন না। স্বল্পকথায় কংক্রিট বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। ঋজু, দিকনির্দেশনামূলক ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যদানে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। একই দিনে অনেকগুলো সভায় বক্তৃতা দিতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কোনো জায়গায় বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি থাকতো না। সকল বক্তৃতা হতো সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র প্রকৃতির।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। বিশেষ রাজনৈতিক দর্শনের অধিকারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও তিনি ছিলেন পরমতসহিষ্ণু পুুরুষ। অন্যের বক্তব্য তিনি মনোযোগ সহকারে শুনতেন, ভিন্নমতকে গুরুত্ব দিতেন এবং কোনো পয়েন্টে বিরোধিতা করতে হলে যুক্তিনির্ভর আলোচনা করতেন। তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা, যা বিশ্বাস করতেন-তাই বলতেন। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হয়েও আপাদমস্তক তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। সব শ্রেণীর, সব ধর্মের মানুষের প্রতি তাঁর ছিল মমত্ববোধ। উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ বলতে যা বোঝায় -অধ্যাপক খালেদ তাই। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা তাঁকে মহীরূহ করে তুলেছে, করে তুলেছে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে