অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দীনকে যেমন দেখেছি

সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী | বৃহস্পতিবার , ২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দীন আমার বন্ধু। তার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে হাজারো স্মৃতি, নানা কথা মনে পড়ছে। তার জীবনের ব্যাপ্তি ও কর্মকাণ্ড ছিল বিস্তৃত ও বিশাল। সংক্ষেপে কফিলের জীবন কর্ম লেখা সম্ভব নয়। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী মীর কফিল উদ্দিনের নানাক্ষেত্রে বিচরণ ও অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও সংগঠন করতে গিয়ে মীর কফিলের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমিতি ৮২র একজন সক্রিয় নেতৃত্বদানকারী সংগঠক ছিল এবং ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে উক্ত সংগঠনে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে অত্যন্ত দক্ষতার ও সুনামের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিল। মির কফিল প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী সমিতি চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করে।

মীর কফিল উদ্দিন শিক্ষা জীবন শেষ করে ১ জুলাই ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী সরকারি কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১৪ মে কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব নেয় এবং অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে ৬ মে ২০১৮ সালে অবসরে গেলেও ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রিন্সিপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে। মীর কফিল ১৯৫৮ সালের ৬ মে হাটহাজারীর মীর বাড়ির এক সম্ভ্রাান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে। তার বাবার নাম আলহাজ্ব মীর মোস্তাক আহমেদ এবং মাতার নাম শফিউন নাহার। মির কফিল বাঁশখালীর খানখানাবাদ নিবাসী বিশিষ্ট আইনজীবী আলহাজ্ব আবদুস সবুরের কন্যা লেখিকা তহুরীন সবুর ডালিয়াকে বিয়ে করে। তার স্ত্রী তহুরীন সবুর ডালিয়াও এনায়েত বাজারস্থ চট্টগ্রাম মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। প্রাণবন্ত সজ্জন অমায়িক মানুষ হিসাবে সর্বজনজ্ঞাত মির কফিল উদ্দিন ছিলেন পরোপকারী একজন সাদা মনের মানুষ। ২০২০ সালের দিকে তার দেহে মরণঘাতী ক্যানসার ধরা পড়ে। সাথে সাথেই ভারত ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে তার চিকিৎসা শুরু হয়। সে কখনো নিজেকে অসুস্থ ভাবত না, তার প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি ও মনোবল তাকে অসুস্থ অবস্থায়ও নানা সাংগঠনিক, সামাজিক কাজকর্ম করতে সহায়তা করে। ২০২২ সালে আমরা কজন বন্ধু যখন পরিবার নিয়ে সিলেট যাই, তখন কফিলও আমাদের যান সেখানে সুনামগঞ্জ ট্যাংগুয়ার হাওরে তার প্রাণচঞ্চল পদচারণ আনন্দ উৎসাহ ও গান গাওয়া সবার নজর কাড়ে। এই বছরের প্রথমদিকে মির কফিল ভাবীকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে আমার বাসায় আসে। তখন তাকে খুব সুস্থ দেখাচ্ছিল। অনেকক্ষণ আড্ডা দেবার পর একসাথে রাতে খাবার গেলাম।

২০২৩ সালের শেষদিকে মির কফিল বার বার গুরুতর অসুস্থ হচ্ছিল এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিল। গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাস সে অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এবং ক্যান্সারের লড়াই করতে করতে অবশেষে গত ১৮ অক্টোবর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ১৯ তারিখ তাকে লাইফসাপোটে দেয়া হয়। অতপর লাইফসাপোট থেকে বন্ধু মির কফিল আর ফিরে আসেনি ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। পরেরদিন ২১ অক্টোবর মির বাড়ি প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রচুর মানুষ শরীক হয়। জানাজে শেষে তাকে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে মীর স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান রেখে যায়। মীর কফিলের মৃত্যুতে সমাজ ও বন্ধু মহলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হল তা সহজে পুরণ হবার নয়। বন্ধু মির কফিলকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন।

বি.দ্র. : বন্ধু অধ্যক্ষ মীর কফিল উদ্দীনের শোক সভা আগামীকাল ৩ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রফেসর ড. অনুপম সেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম এবং সভাপতিত্ব করবেন প্রফেসর ফরমুজুল হক ফারুক। লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধপৃথিবী ঘুরছে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথে
পরবর্তী নিবন্ধড. দীনেশচন্দ্র সেন : বঙ্গভাষার সেবাব্রতী