অতিরিক্ত ভাড়া আদায় দিনভর বাকবিতণ্ডা

দেয়া হয়নি ভাড়ার তালিকা ছিল না কোনো স্টিকার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনের ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত করেছে সরকার। তবে গ্যাস ও পেট্রোলচালিত যানবাহনের ভাড়া বাড়বে না বলে ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি সোমবার থেকে কার্যকর হলেও সরকারি প্রজ্ঞাপনে কর্ণপাত করেননি গ্যাসচালিত যানবাহন চালকরা। এতে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে দিনভর বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির মধ্যেই ছিল এসব গণপরিবহনের যাত্রীসেবা। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে দিনভর নৈরাজ্য চললেও বিআরটিএ’র নজরদারি ছিল দুর্বল।
গতকাল সোমবার নগরীর কাজির দেউড়ি, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, লালখান বাজার, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ এলাকা সরেজমিন দেখা যায়, বেশিরভাগ যানবাহন ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করছে। শুধু ডিজেল চালিত নয়, গ্যাসে চালিত যানবাহনগুলোতেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। তবে বাকবিতণ্ডা চললেও শেষমেষ পরিবহন শ্রমিকদের কাছে হার মেনে বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের।
সচেতন যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার বাস, মিনিবাসের জন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও নগরীর প্রায় সবগুলো যানবাহনই বিআরটিএ’র রোড পারমিট ও রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভঙ্গ করে অতিরিক্ত আসন যুক্ত করে যাত্রী বহন করে আসছে আগে থেকেই। নগরীর আগ্রাবাদ থেকে অটোটেম্পু করে জামালখান মোড়ে নামলেন বাসু দেব নামের এক যাত্রী। বিকেল সাড়ে চারদিকে তিনি টেম্পু থেকে নেমে ১০ টাকা ভাড়া দেন। চালক কোন টাকা ফেরত দেননি। বারিকবিল্ডিং থেকে জামালখান পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চালক সুমন বলেন, ‘শুধু আমি নই, সবাই দুই টাকা বাড়তি নিচ্ছে, আগ্রাবাদ থেকে জামালখান ৮ টাকা, ভাড়া আমরা ১০ টাকা নিচ্ছি।’
বহদ্দারহাট থেকে বাসে ষোলশহর পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ৫টাকা। মো. ফরিদ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আগে ৫ টাকা দিয়ে বহদ্দারহাট থেকে ষোলশহর আসতাম। এখন সর্বনিম্ন ভাড়ার অযুহাতে ১০ টাকা নেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়ার কারণে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে প্রায় সব যাত্রীকে। ওই গাড়িতে যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া নিয়ে হইহুল্লোড় করলেও হেলপার কর্ণপাত করছে না।’
নগরীর ১নং রুটে কালুরঘাট থেকে নিউমার্কেট, ৩নং রুটে নিউমার্কেট থেকে মুরাদপুর হয়ে অঙিজেন-ফতেয়াবাদ, ৪নং রুটে নতুন ব্রিজ থেকে বারিক বিল্ডিং, ১১নং রুটে কাটঘর থেকে অলংকার পর্যন্ত চলাচলকারী মিনিবাসগুলোর অধিকাংশই গ্যাসে চলে। অথচ ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের সাথে মিলে এসব মিনিবাসগুলোতেও বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে। কাজির দেউড়ি থেকে প্রতিদিন ৫টাকা ভাড়া দিয়ে প্রবর্তক মোড় যেতেন তাসলিমা আকতার নামের এক নার্স। তাকে দিতে হয়েছে ৮টাকা। তাসলিমা বলেন, প্রতিদিন ৫টাকা ভাড়ায় আসতাম প্রবর্তক মোড়ে। ৮ টাকা দিতে হয়েছে। অথচ আমি যেই গাড়িটিতে চড়েছি, সেটিতে গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে।’
নগরীর নয়াবাজার বিশ্বরোড মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোটেম্পুর ভাড়া ছিল ৮ টাকা। এখন যাত্রীদের থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। নয়াবাজার বিশ্বরোড মোড় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখন নিচ্ছে ১৫ টাকা। উঠানামা ৫ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৮ টাকা।
সাকের হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘দেওয়ানহাট মোড় মুরাদপুর পর্যন্ত হিউম্যান হলারের ভাড়া ছিল ৭ টাকা, এখন করা হয়েছে ৯ টাকা। অথচ এসব গাড়িগুলো গ্যাস চালিত। আবার ভাংতি অযুহাত দেখিতে ১০ টাকা ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। যাত্রীরা যেন গাড়ির চালক-হেলপারদের কাছে জিম্মি। প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হচ্ছে না।’
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিনে আমরাও বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। গ্যাস চালিত গাড়িগুলো যাতে বাড়তি ভাড়া না নিতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবগুলো গাড়িকে চিহ্নিত করে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হবে। বাড়তি ভাড়া না নেয়ার জন্য বাস, মিনিবাসের চালক হেলপারদের কড়া সতর্কতা দেয়া হবে।’
এদিকে সোমবার সকালে নগরীর মুরাদপুর, ২ নং গেইট, বহদ্দারহাট, অঙিজেন মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে বিআরটিএ’র দুই ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে বেশ কয়েকটি বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেলেও প্রথমদিনের কারণে শুধু বাড়তি নেয়া ভাড়া ফেরত দিয়ে সতর্ক করেছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। নগরীর ষোলশহর এলাকার অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিআরটিএ’র আদালত-১৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার। তিনি ৫টি যানবাহনকে মামলা দেয়ার বিপরীতে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। তিনি ৪৭টি গণপরিবহন যাছাই করে ১৮টিতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পান। অন্যদিকে আদালত-১১ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪টি যানবাহনকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একি মিত্র চাকমা।
প্রসঙ্গত, রোববার বাস ভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। নতুন নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, মহানগরে বাসের আগের কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বর্তমানে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। পাশাপাশি মিনিবাসের আগের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বর্তমানে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়েছে। অন্যদিকে দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে আগের ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে বর্তমানে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। তাছাড়া বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮ টাকা করা হয়েছে। গ্যাসচালিত গণপরিবহণগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজালিয়াতি করে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের চেক উত্তোলনের চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধগাড়িতে শিশুর জন্ম