মহামারীর ধাক্কা সামলে ৭২৬ দিন পর স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস শুরু হয়েছে স্কুল-কলেজে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন সব বিষয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্য দিয়ে সশরীরে পূর্ণাঙ্গ শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরতে দুই বছরের অপেক্ষার অবসান হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে অভিভাবকদের মনেও। তাদের আশা, পুরোদমে ক্লাস শুরুর পর মহামারীকালের শিখন ঘাটতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিদিন ক্লাস শুরু হয়েছিল ২ মার্চ থেকেই। তবে মাধ্যমিকে ক্লাস হচ্ছিল সীমিতভাবে। গতকাল তারাও পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরল। আর প্রাক-প্রাথমিকের অর্থাৎ নার্সারি-কেজির মতো ছোট শ্রেণির ক্লাসগুলো শুরু হল দীর্ঘ দুই বছর পর। মহামারী পরিস্থিতিতে অনলাইনেই বিভিন্ন স্কুলগুলো তাদের ক্লাস নিয়ে আসছিল। অর্থাৎ, এসব স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর গতকালই প্রথম ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ পেল। খবর বিডিনিউজের।
এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এতদিন চারটি বিষয়ে এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাস করে আসছিল। অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে সপ্তাহে দুদিন তিন বিষয়ে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একদিন তিন বিষয়ের ক্লাস হচ্ছিল।
গতকাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সব শ্রেণির ক্লাস এক সাথে শুরু হওয়ায় স্কুল এলাকাগুলোও ফিরে আসে চেনা চেহারায়। স্বাভাবিক এই শ্রেণি কার্যক্রমে বাধা হয়ে এসেছিল কোভিড মহামারী। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ব্যাপক বিধিনিষেধের মধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় দেড় বছর দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তবে সীমিত এই শ্রেণি কার্যক্রম আবার বন্ধ হয়ে যায় গত ২১ জানুয়ারি। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে এ দফায় এক মাস বন্ধ থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে আরও অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
অপেক্ষা ফুরাল, চিনল ক্লাসরুম : স্কুলে ভর্তি হয়ে অনলাইন ক্লাসেই কেটে গেছে দুই বছর। অবশেষে পরিচয় ঘটল ক্লাসরুম, স্কুল বেঞ্চ, ব্ল্যাক বোর্ড আর বন্ধুদের সঙ্গে। মহামারীর মধ্যে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর প্রাক-প্রাথমিকের শিশুরাও ক্লাসে ফিরেছে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুদিন রবি ও মঙ্গলবার ক্লাস করবে তারা। গতকাল প্রথম দিনের ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। তবে কারও কারও মধ্যে কিছুটা জড়তা, কিছুটা ভীতি কাজ করেছে। কেউ কেউ মায়ের হাত ছাড়তে চাইছিল না।