ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির স্থাপনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য বছরের মতো এবারও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতার আয়োজন শুরু হয়েছে। রোজার ত্রিশ দিন এই আয়োজন চালু থাকবে। ইফতারের এই আয়োজনে
ধনী–গরিব, বয়স ও শ্রেণি–পেশার কোনো ভেদাভেদ নেই। সকল শ্রেণির, সকল পেশার, সকল বয়সের মানুষ কাতারবদ্ধ হয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে ইফতার করছেন। অনন্য এই দৃশ্য আপ্লুত অনেকে। ইফতারের আগ মুহূর্তে মোনাজাতের সময় দুই হাত তুলে অনেকে পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টির আশায় আকুতি করতে দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রমজানের প্রথম দিন এ দৃশ্য দেখা গেছে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। অবশ্য এবারসহ গত ২৩ বছর ধরে এ মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হলো। গতকাল প্রথম রমজানে অংশ নিয়েছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। আয়োজকরা তাদের অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে জানিয়েছেন, রমজানের শেষ দিকে এসে ইফতারে অংশ নেওয়া লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন ইফতারের আয়োজনও বাড়ানো হবে। এর কারণ হচ্ছে, রমজানের শেষের দিকে আশপাশের মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজনও ইফতার করতে মসজিদে ছুটে আসেন। তাই তখন লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
জানা গেছে, মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ। এর ৩২৯ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের খতিব হিসেবে যোগ দেন মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী। তখন তিনি মক্কা–মদিনার আদলে এই মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজনের চিন্তা করেন। তার প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে ছোট পরিসরে রোজাদারদের জন্য আয়োজন করা হয় ইফতারের। ২০০৭ সালে এ আয়োজন বড় পরিসরে রূপ নেয়। সেই থেকে প্রতি রমজানে এখানে একসঙ্গে শত শত রোজাদার ইফতার করে আসছেন। জানা গেছে, সকাল থেকে শুরু হয় ইফতার আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। ৮ জন বাবুর্চি পুরো রমজান মাসে ইফতার তৈরিতে কাজ করবেন। ইফতার সরবরাহে কাজ করবেন বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। অতীতের ন্যায় এবারও ইফতারে আছে নয়টি পদ। এগুলো হচ্ছে খেজুর, ছোলা, ছমুচা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, মুড়ি, অন্তন ও জিলাপি। এর সঙ্গে থাকে শরবত। অতীতে মাঝেমধ্যে মৌসুমী ফল ও বিরানি দেওয়া হতো। ছয়জন একসঙ্গে ইফতার করতে পারে মতো বড় থালার পাশাপাশি সিঙ্গেল প্লেটেও সরবরাহ করা হয় ইফতারের। তবে ধনী–গরিবের জন্য আলাদা কোনো ইফতার উপকরণ থাকে না। সবার জন্য একই উপকরণ থাকে, যা ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক।
ধনী–গরিবের এক কাতারে ইফতারের এই আয়োজনে আশেপাশের দোকানের অনেক রোজাদার সামিল হন। অনেকে বাসায় ইফতার না এখানে আসেন। গতকাল ইফতারে মসজিদের খতিব মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী অংশ নিয়ে দোয়া করেন।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সহকারী মোহাম্মদ হাছান মুরাদ গতকাল আজাদীকে বলেন, খতিব হুজুরের তত্ত্বাবধানে সামগ্রিক আয়োজন চলছে। আজ (গতকাল) দুই হাজারের বেশি রোজাদার ইফতারে অংশ নিয়েছেন। এবারও পুরো রমজানে আয়োজন চলবে বলে জানান তিনি।