স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শনিবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় সরকার শপথ গ্রহণ করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত এ সরকারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া পান। এম এ জি ওসমানী প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পান। খবর বিডিনিউজের।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।
সেসব দিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমপ্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। তখন ভাবলাম আগরতলা গিয়ে যদি কিছু জানা যায়। যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন আছেন, হবিগঞ্জের কয়েকজন আছেন। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর কয়েকজন মিলে প্রায় ২৫-২৬ জন এমপি-এমএনএ পাইলাম। কলকাতায় তখন সরকার গঠনের আলাপ হচ্ছে। আগরতলা থেকে কলকাতায় যোগাযোগ হচ্ছে। আগরতলায় আলাপ আলোচনা হল। তাজউদ্দীন সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি আর বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি-এই তিন ব্যাপারে আমরা একমত ছিলাম। যারা আগরতলায় ছিলাম তারা আরকি।
মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথ তলার নাম রাখেন ‘মুজিবনগর’। সেই থেকে কলকাতায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিবনগর’ সরকার নামে পরিচিতি পায়। এই সরকারের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
ওই সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী তার ‘৭১ এ দশ মাস’ বইতে লিখেছেন, আকাশবাণী শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে সরকার গঠনের গোষণা দেওয়া হয়।
এই সরকার গঠনের পর তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি রাষ্ট্রপতির আদেশ জারি হয়। এইদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম ‘আইনের ধারাবাহিক আদেশ’ জারি করেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপস্থিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা গৃহীত হয়। সদ্য প্রয়াত এইচ টি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে প্রচার করা হয়। দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের চেষ্টায় ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।